• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

করোনা মহামারিতেও থেমে নেই অগ্রযাত্রা


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ০৫:১৩ পিএম
করোনা মহামারিতেও থেমে নেই অগ্রযাত্রা

ঢাকা: ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সারাবিশ্ব। এমন প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ এখন যে ধরণের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি।’ ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। 

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আইএমএফ প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এ তথ্য জানানো হয়। আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য মাথাপিছু জিডিপি চার শতাংশ বেড়ে হতে পারে এক হাজার ৮৮৮ ডলার। সেখানে ভারতের সম্ভাব্য মাথাপিছু জিডিপি ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে হতে পারে এক হাজার ৮৭৭ ডলার। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের দ্বিতীয় বর্ষ এটি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। গত ১০ বছরের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলছে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। বাংলাদেশের আজ সব সূচকে অগ্রগতি। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। 

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের সাফল্যের মধ্যে কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। সর্বজনীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে বই বিতরণ, সরকারের বড় দাগের সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। রাজধানীর যানজট কমাতে মেট্টোরেলের কাজও অধিকাংশ প্রায় সম্পন্ন।

এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানব সম্পদের উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, বৈশ্বিক উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জন, সারাদেশে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু, পরিবেশের উন্নয়ন ও দুর্যোগ মেকাবিলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, বিদ্যুত উৎপাদন, স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের প্রশংসা করছেন বিশ্লেষকরা।

এছাড়া সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গত এক বছরে দেশের উন্নয়নে এবং বিভিন্ন সরকারি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যা সরকারের সাফল্য এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। 

প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ প্রণোদনায় বাড়তে শুরু করেছিল রেমিটেন্স। করোনায় হঠাৎ ধাক্কা লাগে প্রবাসী আয়ে। বৈশ্বিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ পথ। ফলে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নতুন নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে গেছে। করোনার মধ্যে রিজার্ভ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। মাথাপিছু আয় প্রথমবারের মতো দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২০৭৪ ডলার। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় আড়াই গুণ হয়েছে।

পদ্মাসেতু প্রকল্পে চলতি বছরের শুরুতে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। মহামারীর শুরুতে চীনাসহ বিদেশি শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পরও মার্চের শুরুতে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক ছিলেন। তাদের নিয়েই সীমিত পরিসরে কাজ চলছিল। বছরের শেষে এসে পুরোদমে কাজ শুরু হয় প্রকল্পটির কাজ।

দক্ষিণ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে যে বিপুল কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছিল পদ্মার পাড়ে, তা পূর্ণ অবয়ব পায় গত ১০ ডিসেম্বর। সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয় সেদিন; তৈরি হয় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ। 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১০ মাস থেকে একবছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হবে। এর মধ্যে সেতুতে ঢালাইয়ের কাজ, সড়কের জন্য প্রস্তুত করা, রেলের জন্য প্রস্তুত করার কাজ শেষ করা হবে। সব ঠিক থাকলে ২০২২ সালের প্রথমভাগেই এ সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে বলে সরকার আশা করছে। 

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ বসানো হচ্ছে।

২০১৬ সালে প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, মেয়াদ ধরা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর। কিন্তু ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের ব্যয় আরও চার হাজার ২৬৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩১ শতাংশের বেশি ভৌতকাজ এ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। মহামারীর কারণে অন্য অনেক প্রকল্প সাময়িক গতি হারালেও এ প্রকল্প সেভাবে বাধাগ্রস্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. শওকত আকবর। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজের ২৬ শতাংশের মত শেষ হয়েছিল মার্চে মহামারীর শুরুর আগে।

মহামারীর মধ্যেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে দিনরাত কাজ চালিয়ে মেয়াদের তিন বছর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু করার নতুন লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে এখন। 

এমআরটি-৬ নামের এ প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত ২০২১ সাল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ছিল।

গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আগের বছরের নভেম্বরে সার্বিক অগ্রগতি ছিল ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর এ বছরের জানুয়ারিতে ৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ কাজ এগিয়েছিল। মেট্রোরেল-৬ বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা, যার ৭৫ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান সরকারের সহযোগী সংস্থা জাইকা।

‘ওয়ান সিটি-টু টাউন’ মডেলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদশে তৈরি হচ্ছে সাড়ে তিন কিলোমিটারের সুড়ঙ্গপথ। চীনা অর্থায়নে চলমান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।

মহামারীর শুরুতে গত মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পের মোট ৫১ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। এরই মধ্যে নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি টিউবের মধ্যে একটি খনন ও রিং স্থাপন কাজ শেষ হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজ। নদীর তলদেশের নিচে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল, দুই মুখে সড়ক আর ওভারপাস বা সেতুসড়ক নির্মিত হচ্ছে। 

২০১৫ সালে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পে সময়মতো অর্থ ছাড় না করায় কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের শেষের দিকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 

সোনালীনিউজ/এসআই/এএস

Wordbridge School
Link copied!