ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমন সারাজীবন নিপীড়িত বাঙালির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি রাজনীতি করেননি। রাজনীতি করেছেন বাঙালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে। এজন্য তিনি ফাঁসির মঞ্চে যেতে রাজি ছিলেন। তার নির্দেশেই বাংলার মানুষ মুক্তিসংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে স্বাধীন ভূখণ্ড। স্বাধীন পতাকা।
স্বাধীনতার পর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। গড়ে তুলছিলেন দেশ। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও বৈষম্য দূর করার জন্য নিয়েছিলেন নানা কর্মসূচি। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে থামিয়ে দেয়।
১৯৭৫ সালের আগস্টের কালরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে সপরিবারে তাকে হত্যা করে। দেশের বাইরে থাকায় তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। আজ সেই শোকাবহ আগস্টের তৃতীয় দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ আগস্ট ছিল রোববার। ঘাতকরা জাতির পিতাকে হত্যা করলেও বাঙালির হৃদয় থেকে তাকে মুছে ফেলতে পারেনি। তাই এখনো তার আদর্শ ও স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
এখনো তার নামেই হয় মুক্তির জয়ধ্বনি। কবির ভাষায় বলতে গেলে-‘ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে চিরকাল, গান হয়ে নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা; যাঁর নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয় জ্যোৎস্নার সারস, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো দুলতে থাকে স্বাধীনতা, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। ছাত্র অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। সংগ্রামের মধ্যেই তিনি বড় হয়েছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ’৫২-র ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা।
শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ৬ দফার প্রণেতাও ছিলেন। ’৭০-র নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা।
যে বাঙালির জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে বন্দি থাকার সময়ও বলেছেন-আমার লাশটা আমার বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও। যে বাঙালিকে তিনি নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। সেই বাঙালি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে! তাকে হত্যা করতে পারে; এমনটা কখনো বিশ্বাস করতে পারতেন না বঙ্গবন্ধু।
এখনো সূর্য ওঠে রোজ। নতুনের কেতন উড়িয়ে মানুষ স্বপ্ন জয়ের প্রত্যয়ে এগিয়েও চলে নিত্যদিন। তবুও সে স্বপ্নে অপূর্ণতা রয়ে যায়। সে অপূর্ণতা যেন শুধুই স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে হারানোর। বঙ্গবন্ধু একটা কথা বারবার বলতেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। আমরা যদি সোনার মানুষ না হই, আমরা যদি জনগণের আস্থাভাজন সেবক না হই, আমরা যদি জনগণের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে না পারি তাহলে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তদান ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :