ঢাকা : ‘এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী/ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি/হেরিতে এখনও মানবহৃদয়ে তোমার আসন পাতা/এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা-পিতা-বোন-ভ্রাতা।’
কবি সুফিয়া কামাল বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এভাবেই স্মরণ করেছেন। পুবের আকাশে এখনো রোজ রক্তিম সূর্য ওঠে। নতুনের কেতন উড়িয়ে মানুষ স্বপ্ন জয়ের প্রত্যয়ে এগিয়েও চলে নিত্যদিন। কিন্তু সে স্বপ্নে অপূর্ণতা রয়ে যায়। সে অপূর্ণতা স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে হারানোর। আজ সেই শোকাবহ আগস্টের ষষ্ঠ দিন। ১৯৭৫ সালের ৬ আগস্ট ছিল বুধবার।
বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠা। শৈশব-কৈশোর থেকে তিনি এই আদর্শ নিয়েই বড় হয়ে ওঠেন। নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করে তোলেন। তার এই চারিত্রিক দৃঢ়তার পেছনে ছিল গভীর অধ্যয়ন, জানা-চেনা-শোনা ও দেখার গভীর অন্তর্দৃষ্টি। তিনি হৃদয়ের আবেগকে যথেষ্টভাবে ধারণ করতে সমর্থ হন। এর পেছনে ছিল মানুষকে ভালোবাসা ও সাহায্য করার জন্য তার দরদি মন। বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, ‘সাত কোটি বাঙালির ভালোবাসার কাঙাল আমি। আমি সব হারাতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারব না।’
কোনো বাঙালি তার জীবনের হুমকি হতে পারে, কখনো ভাবেননি বঙ্গবন্ধু। এ কারণে বাড়তি নিরাপত্তার ধার ধারেননি তিনি। সুরক্ষিত রাষ্ট্রপতির বাসভবন ছেড়ে বসবাস করতেন প্রিয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। কিন্তু রাতের আঁধারে সেই বাড়িতে পৈশাচিক পন্থায় হামলা চালায় দিগ্ভ্রান্ত সেনা কর্মকর্তারা। বুলেটের আঘাতে ‘রক্তগঙ্গা’ বয়ে যায়। ঝাঁজরা হয়ে যায় দরজা, জানালা, দেওয়াল।
বাঙালির স্বাধিকার, স্বাধীনতা, আন্দোলন-সংগ্রামের এই তীর্থ ভূমিতুল্য বাড়িটি অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতাসংগ্রাম শেষে যখন ক্ষতবিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন, তখনই এমন নির্মমতা দেখার কথা কে কবে ভেবেছিল!
ঘাতকের দল তার সেই প্রিয় বাঙালিদের কাছ থেকে, স্বপ্নের স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশ থেকে, প্রিয় বাড়িটি থেকে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শরীরী মুজিবকে হত্যা করলেও বাঙালির হৃদয় থেকে প্রিয় পিতাকে মুছে ফেলতে পারেনি তারা। তাই আজও শ্রাবণের বৃষ্টি, সবুজ মাঠের সীমানা, নদীর পার ঘেঁষে সমুদ্রের পানি, গাছের পাতাগুলোও শোকে ঝরছে অবিরল।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :