ঢাকা: এমপিওভুক্তি নীতিমালার সংশোধনের কাজ শেষ হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালার আলোকে চলতি বছর নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শনিবার শিক্ষা-বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইরাব) ‘কলম’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ইরাবের সভাপতি ও দৈনিক সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি সাব্বির নেওয়াজের সভাপতিত্বে এবং ইরাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম সুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বিশিষ্ট সাংবাদিক শরিফুজ্জামান পিন্টু, স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতির নেতা শাজাহান সাজু, ইরাবের যুগ্ম সম্পাদক ও ম্যাগাজিনের সদস্য সচিব মীর মোহাম্মদ জসিম প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঝুলে থাকা অনেক কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। নানা অসঙ্গতি থাকা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এমপিওভুক্তি নীতিমালা যুগোপযোগী করে তোলা হয়েছে। সংশোধিত এ নীতিমালার আলোকে চলতি বছর নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন চাওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণবিহীন শ্রেণিকক্ষে ঢুকবেন না। যদিও আমাদের এখনকার শিক্ষকরা চার-পাঁচ বছর পাঠদান করার পর প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতেন। ততদিনে সেই শিক্ষকের এমনভাবে মাইন্ডসেট তৈরি হয়ে যায় যে, তিনি শিক্ষক আর নতুন করে কিছু শিখতে আগ্রহী হন না। বর্তমানে পাঠদানে ক্লাসে যাওয়ার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষকদেরকে শুধু বুনিয়াদি নয়, বিষয়ভিত্তিক সফট স্কিল, আইটি এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, কারিগরি শিক্ষার দিক থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থী ভর্তির দিক থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁই ছুঁই ছিল। কিন্তু আমাদের কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি এই দীর্ঘ সময়ে। এই সময়ে এসে যে শিক্ষক প্রয়োজন তাদের নিয়োগের পুরো ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যেই অনেক শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা সেক্টরে এমন কোনো বাণিজ্য নেই যেটার কবলে আমরা পড়িনি। করোনায় শিক্ষা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনা প্রয়োজন আছে। কারণ শিক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের ইন্টারনেটের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারণ সম্প্রতি ইন্টারনেটে সক্ষমতা নিয়ে যে রিপোর্ট এসেছে সেখানে বাংলাদেশ ১৩৭টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে শিক্ষকদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ এখানে নগরের শিক্ষকরা সুবিধা বেশি পাচ্ছেন। শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। আমরা অনেক ক্ষেত্রে অনেক আইন দেখি। কিন্তু সেটির মনিটরিং ও বাস্তবায়ন জরুরি। আমাদেরকে স্বাধীনতা পরবর্তী যেসব অর্জন রয়েছে সেগুলোও পুনরুদ্ধারে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষায় কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। করোনা আমাদেরকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এরপরও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দুই-একটি ছাড়া বাকি কার্যক্রম আমরা করতে পেরেছি। আমাদের মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক ঘাটতি ছিল। আমরা ইতোমধ্যে সেটি পূরণ করার চেষ্টা করেছি। এসব স্কুলে দুই হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন পর বেসরকারি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে তারা নিয়োগ পাবেন।
কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, পিএসসির পক্ষ থেকে এক হাজার ২০০ শিক্ষকের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। এছাড়াও সাড়ে চার হাজার শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। পাঠ্যক্রম পরিবর্তনে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে কিছু কাজ হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোনালীনিউজ
আপনার মতামত লিখুন :