ঢাকা : দেশে আগাম নির্বাচন হতে পারে। এমন কথা এখন ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। এনিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী শিবিরে শুরু হয়েছে জোর তৎপরতা। আওয়ামী লীগেও চলছে আগাম প্রার্থী যাচাই।
এদিকে জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, যখনই নির্বাচন হোক অংশ নিতে তারা প্রস্তুত।
আর বিএনপি বলছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিবে না তারা। অন্যদিকে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। আপাতত দেশে আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর আগামী সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে প্রার্থী যাচাইও শুরু করছে আওয়ামী লীগ। চলতি মাসের শুরু থেকে সারা দেশে সংসদীয় এলাকা ধরে বর্তমানের সব নিবন্ধিত দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছে দলটি। একাধিক সংস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে এ কাজ করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
যদিও দ্বাদশ নির্বাচনের এখনো দুই বছরেরও বেশি সময় বাকি থাকতে প্রার্থী যাচাইয়ের কাজটিকে বেশ আগাম বলেই রাজনৈতিক মহল অভিমত দিচ্ছেন। এর মধ্যে তাৎপর্যও খুঁজছেন অনেকে।
অনেকের মতে, আগামী সাধারণ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সরকারে তাগিদ রয়েছে। যারা প্রার্থী যাচাই করছেন তারাও জানতে চাইছেন সব দল বিশেষত বিএনপি ও জামায়াত যদি নির্বাচনে অংশ নেয় সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে কারা প্রার্থী হলে বিজয়ী হতে পারেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এবার বেশকিছু নতুন তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। সম্ভাব্য মূলপ্রার্থী ছাড়াও বিকল্প প্রার্থীর নামও নেওয়া হচ্ছে।
আবার বিকল্প প্রার্থী অথবা কোনো কারণে প্রার্থী যদি দুর্বল হয় সে ক্ষেত্রে তাকে পাস করানোর জন্য করনীয় কী হবে, সে বিষয়েও জনমত নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কোনো প্রার্থীর সম্পর্ক ভালো কি মন্দ অথবা পুলিশ বিরোধী মনোভাবাপন্ন কি না সে বিষয়েও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। দলীয় কর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে কোন দলের কোন প্রার্থীর সম্পর্কের বিষয়টিও যাচাই প্রতিবেদনে স্থান দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী, সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থী-এ দুইজনের মধ্যে যোগ্য কে, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে কোন দলের প্রার্থী সংশ্লিষ্ট আসনে জয়ী হতে পারে এবং আওয়ামী লীগ ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হচ্ছে।
তাছাড়া, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কোন দলের কোন প্রার্থীর ভোট কত সেটিও জেনে নেওয়া হচ্ছে।
২০০১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে যেখানে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কোন দলের প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে, ভোটের ব্যবধান কত ইত্যাদি তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, আগাম নির্বাচন নয়। মূলত নির্বাচনি প্রস্তুতির মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করাই এখন দলটির মূল চ্যালেঞ্জ।
কারণ, দলের মধ্যে কাউকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। তৃণমূলে কোন্দল মেটাতে তাই আবারো সাংগঠনিক সফর শুরু হচ্ছে। এ জন্য প্রায় আড়াই বছর আগেই দলটি মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তৃণমূলের সাংগঠনিক দুরবস্থার নানা চিত্র তুলে ধরেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা।
প্রতিবেদনে উঠে আসে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংসদ সদস্যদের দলীয় সাংগঠনিক বিষয়ে প্রভাব বিস্তার, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়াসহ নানা বিষয়। যার প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে পারে। তবে দলটির নেতারা মনে করেন, এসব কোন্দল অবশ্যই সমাধানযোগ্য।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, মনোনয়নের আগে যারা এমপি আছেন তারা চেষ্টা করবে তাদের এমপি পদ ধরে রাখা। আবার কিছু নেতা চেষ্টা করবেন এমপি মনোনয়ন পাওয়ার। মূলত এ বিষয়টি নিয়েই প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে।
কোন্দল মেটানো সম্ভব, আমরা এলাকায় এলাকায় প্রতিনিধি করে এসব কোন্দল মেটানোর পদক্ষেপ নিয়েছি।
এবিষয়ে দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, মাদারিপুর আওয়ামী লীগে সাংগঠানিক কোনো সমস্যা নেই, তবে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে।
এছাড়া নরসিংদী জেলায়ও একটু সমস্যা ছিল সেখানে আমরা ইতিমধ্যে সম্মেলন করেছি। এখন আর সমস্যা নেই বললেই চলে। আমরা সাংগঠনিকভাবে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
দলে সবাই যেন মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান জ্যেষ্ঠ নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, শুধু এমপি না যারাই দলের মধ্যে একটা নিজস্ব বলয় তৈরি করার চেষ্টা করছে সবাইকে বলা হয়েছে আমাদের একমাত্র আস্থার জায়গা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
সুতরাং ঘরের ভেতর আবার ঘর বানিয়ে কেউ কোনো ধরনের লাভবান হতে পারবে না। এগুলো যারা যারা করছে বলে বিবেচিত হয়েছে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন করার জন্য বিরোধী পক্ষ সোচ্চার। তবে সরকারি দল বলছে, রাজনীতি ঘোলা করতে নতুন অস্থিরতা তৈরি করছে বিএনপি। তবে আগামী নির্বাচন কি ভাবে হবে এবং তার আগে আইন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ জরুরি বলে মনে করেন বর্তমান ও সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা।
তবে তাদের প্রশ্ন, সংবিধানে থাকলেও কোনো সরকারই কেন আইন করেনি। সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া বলেও মন্তব্য করেছেন একজন সাবেক কমিশনার।
সামনের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ। নতুন নির্বাচন কমিশনে কারা থাকবেন এ নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পর চলে বির্তক। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে আছে, রাষ্ট্রপতি ইসি নিয়োগ দেবেন। এ নিয়ে একটি আইন করার কথাও স্পষ্ট বলা আছে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো সরকারই এই আইন করেনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. রফিকুল হক বলেছেন, আইন করে ইসি গঠন প্রয়োজন। তবে এতে বিতর্ক এড়ানো যাবে কিনা, সেই প্রশ্নও তার। ১০ বছর ধরে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এই প্রক্রিয়াকে অস্বচ্ছ বলছেন সাবেক এই কমিশনার।
এদিকে বাংলাদেশে আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় পাঁচ বছর জন্য। তারপরও সরকার যে কোনো সময় নির্বাচন দিতে পারেন।
আজকে জনগণ স্বস্তিতে আছে, শান্তিতে আছে। আগাম নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠে না। তাই বর্তমান সরকার পাঁচ বছর পূর্ণ করবে এবং নির্ধারিত সময়েই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে সাংবিধানিক সরকার হবে। সংবিধানের আলোকে আগামী দিনে নির্বাচন হবে এবং সেটির দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন।
যে নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো সরকারের, কোনো প্রধানমন্ত্রীর, কোনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা থাকবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো নিয়ন্ত্রণ সেখানে করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক বাহিনী স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :