ঢাকা : রাজধানীতে ঘোষণা ও সরকারি নির্দেশনা ছাড়াই বাসভাড়া প্রায় দেড়গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকরা। গত বুধবার জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণের পর বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) গণপরিবহন মালিক-কর্মচারীরা সব রুটের যাত্রীবাহী বাসে ভাড়া বেশি আদা শুরু করে।
এ নিয়ে দিনভর বিভিন্ন কাউন্টারের কর্মচারীদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগবিতণ্ডা, ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। হঠাৎ ভাড়া বাড়ানো নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তবে বাস মালিকরা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়েই বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল সব পরিবহনের মালিকরা সকাল থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করেন। উৎসব ও বন্ধন পরিবহনে আগে ভাড়া ছিল জনপ্রতি ৩৬ টাকা। কিন্তু ১৪ টাকা বাড়িয়ে আদায় করা হয় ৫০ টাকা। শীতল পরিবহনে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা। তা বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে ৬৫ টাকা। এ ছাড়া বিআরটিসি বাস জনপ্রতি নিচ্ছে ৩০ টাকা করে।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার হিসাব অনুযায়ী তারা এমনিতেই ৪-৫ টাকা বেশি আদায় করে আসছিল এতদিন। বুধবার রাত থেকে সরকার ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু বাস মালিকরা কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমতো যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লাগামছাড়া বাস ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষোভ বিরাজ করছে যাত্রীদের মাঝে। চাষাড়ায় যাত্রী শাহীন ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশটা কি মগের মুল্লুক? কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একলাফে ভাড়া ১৪ টাকা বাড়ছে, কে নিয়ন্ত্রণ করবে এসব?’ প্রশাসনকে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ফার্মগেটে যাত্রী রফিক বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ছে তাই বলে দেড়গুণ বেশি নিতে হবে? এসবের কী কোনো সমাধান নেই?’ বাস ভাড়া একসঙ্গে এত টাকা বাড়ানোর কোনো নজির নেই। আমরা আসলে অসহায়।
বিভিন্ন কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা জানান, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে কর্তৃপক্ষ আমাদের বেশি ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা সেই নির্দেশ মোতাবেক ভাড়া আদায় করছি। এ কারণে সকাল থেকে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের চিৎকার, চেঁচামেচি ও বাগবিতণ্ডা করতে হচ্ছে। অনেক যাত্রী আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। যাত্রীদের বোঝাতে গিয়ে আমরাও হাঁপিয়ে উঠছি।
গণপরিবহনের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে বাস ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। আগের বছর রুট পারমিটসহ কাগজপত্র নবায়ন করতে লাগতো ৩০ হাজার টাকা। এখন বছরে দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা। আগে একটি চাকার দাম ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এখন সেই চাকা কিনতে হয় ২৭ হাজার টাকা করে। রাস্তায় নানা প্রকারের চাঁদা দিয়ে বাস চালাতে হয়। কিন্তু সেই হিসাবে বছর বছর আমাদের ভাড়া বাড়ে না। তাই এবার ডিজেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ভাড়া বাড়িয়েছি।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :