ঢাকা : সারাদেশে প্রধান শিক্ষকের সংকট এখন তীব্র। বহু জেলায় সরকারি হাই স্কুলে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। কোনো কোনো বিভাগে মাত্র দুই থেকে তিনজন প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। বাকি স্কুলগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে ৩৫১টি প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে ২৩৩টি শূন্য। বাধ্য হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক অথবা যেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই, সেখানে জ্যেষ্ঠ কোনো সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত পদ দিয়ে কোনো রকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কেবল প্রধান শিক্ষক নয়, সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক পদও ফাঁকা। সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৭৭টি পদ থাকলেও এ পদে কেউ নেই ১৫২ সরকারি স্কুলের।
এছাড়া প্রধান শিক্ষক পদমর্যাদার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ১৮টি পদ বর্তমানে শূন্য। ফলে জেলাগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকি করারও কেউ নেই।
যেসব জেলায় কোনো জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নেই, সেগুলো হলো- ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, বগুড়া, ভোলা, ঝালকাঠী, জামালপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, বান্দরবান, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ।
তবে ঈদের আগেই সুখবর পেতে চলেছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে চলেছেন তাদের ২৪৪ জন। এছাড়া ১৮ জনকে করা হচ্ছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
এদিকে, প্রধান শিক্ষক না থাকা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে প্রশাসনিকসহ নানা কাজকর্মে দেখা দিয়েছে জটিলতা। পদোন্নতির অপেক্ষায় থেকে অনেকেই অবসরে চলে গেছেন, কেউ বা যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এতেও শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।
মাউশি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক) আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, প্রতিবছর শিক্ষকরা অবসরে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব পদ পূরণ করতে সময় লাগছে। নিয়োগবিধি অনুসারে ফিডার পদ পূর্ণ না হলে পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে সরকার চাইলে প্রমার্জন করেও পদোন্নতি দিতে পারে। এবার দুই বছর প্রমার্জন করায় একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো।
জানা গেছে, ভয়াবহ প্রধান শিক্ষক সংকট দেখা দেওয়ায় সরকার ফিডার পদ দুই বছর প্রমার্জন করে এসব শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নেয়। পদোন্নতির পর এই শিক্ষকরা পদে যোগ দিলে প্রধান শিক্ষক পদের সংকট প্রায় পুরোটাই কেটে যাবে।
পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষকরা জানান, এ মুহূর্তে ২৪৪টি প্রধান শিক্ষক পদ ফাঁকা থাকলেও সবকটি এখনই পূরণ হবে না। কারণ, নিয়োগবিধি অনুসারে মোট শূন্য পদের ৮০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ হবে।
একাধিক শিক্ষক বলেন, পদোন্নতি পেতে পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা লাগত। এটি শিথিল করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তর হয়ে দুই বছরের অভিজ্ঞতা প্রমার্জন করা হয়েছে।
পদোন্নতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে। সর্বশেষ বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির বৈঠকের পর গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পদোন্নতি ঘোষণার কথা ছিল।
এর আগেই কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে অনেক শিক্ষকের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) 'হারিয়ে' যায়। ফলে সর্বশেষ পদোন্নতি কমিটির ওই বৈঠক স্থগিত করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির ঘোষণা না হওয়ায় পেছনের সিরিয়ালের একাধিক শিক্ষক পদোন্নতির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
কারণ, গত তিন মাসে অন্তত ৫০-৬০ জন শিক্ষক অবসরে গেছেন। আগামী সপ্তাহে ডিপিসির সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :