ঢাকা: রাশিয়া বলেছে, বাংলাদেশের কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা দুঃখজনক। তবে বাইরে থেকেও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমন এক পরিস্থিতিতে ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরি করার জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করা উচিত।
শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ও সংসদে ২২২টি আসনে জয় পাওয়ার কথা উল্লেখ করে রুশ কর্মকর্তা বলেন, “এই সুযোগে আমরা বাংলাদেশের জনগণকে একটি সফল নির্বাচনের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
বাংলাদেশে এবার জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সরকারকে নানাভাবে চাপ দিয়ে এসেছে। তবে রাশিয়া বরাবর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। একাধিকবার দেশটি বলেছে, বাংলাদেশের সার্বভৌমৈত্বের প্রতি পশ্চিমাদের সম্মান জানানো উচিত।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ঢাকায় রুশ ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস একাধিকবার বাদানুবাদেও জড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে জোর দিয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, বাংলাদেশে কীভাবে ভোট হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দেশের মানুষ।
শেষ পর্যন্ত সব দলের অংশগ্রহণে ভোট হয়নি। বিএনপি ও তার মিত্ররা ভোট থেকে দূরে থাকে। আর আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো বড় জয় নিয়ে সরকারে ফিরেছে। এই নির্বাচন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মূল্যায়ন পরস্পরবিরোধী।
৭ জানুয়ারি ভোটের পর দিন সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মন্টিটাস্কি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ৮ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, “এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি এবং সব দল এতে অংশ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।”
তবে বৃহস্পতিবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথের সময় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন। তার এবং পশ্চিমা দূতাবাসের প্রতিনিধিদের বসার জায়গা হয় পঞ্চম সারিতে।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। পরে তিনি এ নিয়ে টুইটও করেন।
এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, “সফল নির্বাচনের ফলাফলে আমরা বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “নির্বাচনে প্রভাবিত করতে বিদেশিদের চেষ্টা দেখা গেছে, যা আমরা গত ২২ নভেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর আমরা উল্লেখ করেছি।
“এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভোটারদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করায় বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করা উচিত।”
জাখারোভা বলেন, “রাশিয়াসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশের নির্বাচনের বৈধতা এবং গ্রহণযোগ্য মানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রুশ প্রতিনিধিদলের (নির্বাচন পর্যবেক্ষণে) নেতৃত্বে ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য আন্দ্রেই শুতোভ।”
এআর