ঢাকা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি সংবাদ শেয়ার করে বিব্রত কর অবস্থায় পড়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলায় কর্মরত সাব ইন্সপেক্টর সালেহ ইমরান। এনিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য হাজেরা খাতুন পারুল তার (ইমরান) হাতের কব্জি কেটে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তুা করে এই পিবিআই সদস্য ভালুকা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- ৬৯৭) করেছেন।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য হাজেরা খাতুন পারুল এই হুমকি দেন অভিযোগ করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এ নিয়ে ভালুকা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- ৬৯৭) করেছেন ইমরান।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে পুলিশ সদস্য সালেহ ইমরান। হুমকির বিষয়টি সত্য কিনা মিথ্যা তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
সাধারণ ডায়েরি বিবরণে জানা যায়, উপজেলার কাচিনা ইউনিয়ন সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১০-১৫ জন লোক সালেহ ইমরানের গ্রামের অসহায় দরিদ্র কৃষকের ৯ একর জমি ১৬ বছর আগে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জাল-জালিয়াতির দলিল করার মাধ্যমে ঢাকা দিলকুশা শাখা অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৭ কোটি টাকার লোন অনুমোদন করে নেয়। পরে জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ সালেহ ইমরানের শরণাপন্ন হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মিডিয়া এবং প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে তাদের সহযোগিতায় ওই লোনটি অনুমোদন হওয়ার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা স্থগিত করে দেয়। পরবর্তীতে ওই জালিয়াতি এবং দুর্নীতি নিয়ে কাদিগড় গ্রামের মো. সমর আলী এবং হাবিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর যথাক্রমে ভালুকা সিআর ৪২০/২০১৯ এবং ৫৩০/২০১৯।
মামলায় দুটি পিবিআই তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মোছা. হাজেরা খাতুন পারুলসহ ১০ জনের নামে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি মোছা. হাজেরা খাতুন পারুলসহ আসামিদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। খবরটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। লোন বাতিল, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং এসব খবর-পত্রিকায় আসার জের ধরে সাব-ইন্সপেক্টর মো. সালেহ ইমরানের প্রতি মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইউপি নারী সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল। এরপর চলতি মাসের ৮ তারিখ দুপুর ২টার দিকে কাচিনা বাজারে কবিরের চায়ের দোকানে কাচিনা ইউনিয়ন পরিষদের কাদিগড় গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু বক্কর সিদ্দিক, কাদিগর গ্রামের মোজাম্মেল ও হানিফসহ আনুমানিক ১৫ জন মানুষের সামনে প্রকাশ্যে সাব-ইন্সপেক্টর মো. সালেহ ইমরানের হাতের কব্জি কেটে ফেলার হুমকি দেন সংরক্ষিত ইউপি মহিলা সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল। তিনি উপস্থিত মানুষের সামনে বলেন, ‘ডরাইলেই ডরে খায়, ঠেইল্লা দিলে কিছুই না।’
এ বিষয়ে সাব-ইন্সপেক্টর মো. সালেহ ইমরান বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা সেখানে তিনি তা না করে বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় প্রকাশ্যে যেভাবে আমাকে হুমকি দিয়েছেন, তাতে তাঁর সহযোগী আসামিদের যোগসাজশে আমি এবং আমার পরিবারের যেকোনো ক্ষতি হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।’
পুলিশ কর্মকর্তার হাতের কব্জি কাটার ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত হাজেরা খাতুন পারুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘সাব ইন্সপেক্টর মো. সালেহ ইমরানকে আমি চিনি না। হুমকি দেয়ার বিষয়টি মিথ্যা বানোয়াট। আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে। কিছুদিন ধরে সাব ইন্সপেক্টর সালেহ ইমরান আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার চালিয়েছে। এমন অভিযোগে সাব ইন্সপেক্টর সালেহ ইমরানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে। তার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই তাই বিষয়টি নিয়ে আর ঝামেলা বাড়াতে চাই নি।
সোনালীনিউজ/এএস/এমএএইচ