মায়ের ভালোবাসার কাছে সবকিছু তুচ্ছ, প্রমাণ দিলেন মিনতী বালা 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২১, ০৮:৫১ পিএম

পাবনা: ছেলের মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিনতী বালা সরকার নিজ সন্তানকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। এ সময় আবেগে আপ্লুত ছেলে বললেন, মাকে কোনো দিন আঘাত করব না। সৃষ্টিকর্তার কাছে মার্জনা চেয়ে নিয়েছি।

গত ২৩ জুন রাতে উপজেলার ভাঁয়না ইউনিয়ন এলাকায় ছেলে ভূষণ কুমার সরকার তার বৃদ্ধা মা মিনতী বালা সরকারকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে স্থানীয়রা মিনতী বালাকে উদ্ধার করে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ২৪ জুন ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মা।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। এরপর সেটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে সর্বমহল থেকে। পরে সুজানগর থানা পুলিশ শনিবার (২৬ জুন) দুপুরে অভিযুক্ত ছেলেকে থানায় নিয়ে আসে।

এদিকে ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনে থানায় ছুটে আসেন বৃদ্ধা মা। এরপর ছেলে ও মা দুজন দুইজনকে দেখেই বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মায়ের পা ধরে ক্ষমা চাইলে মা ছেলেকে ক্ষমা করে দেন। এ সময় থানায় উপস্থিত সবাই অভিভূত হন এমন দৃশ্য দেখে।

ভূষণ কুমার সরকার বলেন, মায়ের সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই পারেন তার সন্তানকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিতে। আমি মাকে আঘাত দিয়ে অনেক বড় অন্যায় করেছি। আর কোনো দিন মা কষ্ট পান, এমন আচরণ করব না। সৃষ্টিকর্তার কাছে মার্জনা বা ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, যেভাবে মাকে আঘাত দিয়েছি, সেটা ক্ষমা করার মতো না। তারপরও আমাকে মাফ করে দিয়েছেন।

মিনতী বালা সরকার বলেন, আমার ছেলে তার ভুল বুঝতে পারায় আমি তাকে আজীবনের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি। সন্তান ভালো থাক, এটাই সব সময় প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তার কাছে। পৃথিবীর সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করে তাদের হাতে মারধর খাওয়া দুঃখজনক। তারপরও পৃথিবীর কোনো মায়েরা চান না যে তার সন্তান কারাগারে থাকুক। আমি ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

সুজানগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, এই দৃশ্যে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। মায়ের ভালোবাসার কাছে সবকিছু যে তুচ্ছ, সেটি আবারও প্রমাণিত হলো। পরে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে ছেলে ভূষণ কুমার সরকারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরেন মা।

মা-বাবাকে মারধর বা তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করতে নিষেধ করে তিনি আরও বলেন, মাতা-পিতাকে মারধর করা এটা রাষ্ট্রীয় অন্যায়।

সোনালীনিউজ/আইএ