সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। করোনাকালীন বন্ধের মধ্যে এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রীদের বিয়ে হয়। এ ঘটনায় বর্তমানে স্কুলটি নিয়ে সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান ও তথ্য দিতে না পারলেও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দাবি করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫০টি বাল্য বিয়ে হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীকে বাল্যবিয়ে না করার শপথ করানো হয়। সে সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে ঘটা করে আয়োজন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি ডাটাবেজের আওতায় এনে লাল কার্ড দেওয়া হয়।
তবে করোনা মহামারির কারণে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত এ স্কুলটি বন্ধ আছে। এ সময়ে এই স্কুলের ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। জেলার প্রায় প্রতিটি স্কুলের চিত্র প্রায় একই রকম। আগে থেকেই বাল্যবিয়ে প্রবণ জেলা সাতক্ষীরায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির কারণে বাল্যবিয়ের হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। তবে করোনা সেই হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে।
আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়া অন্তত ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ের কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে ১৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। কয়েকজনের বয়স ১৮ বছর পার হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে বসা ৫০ শিক্ষার্থীর সবার নাম ঠিকানা দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক।
বাল্যবিয়ের শিকার ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় মন বসতো না মেয়ের। ভালো পাত্র পেয়েছিলাম বলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমি ভোমরা বন্দরে একটি সিঅ্যান্ডএফ অফিসে কাজ করি। গরিব মানুষ, তাই ভালো পাত্র হাতছাড়া করলাম না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলীপুর ইউনিয়নের একজন সিনিয়র বিয়ে রেজিস্ট্রার (কাজী) বলেন, বর্তমানে আইনসঙ্গত উপায়ে বাল্যবিয়ের নিবন্ধন হয় না। কিছু অসাধু রেজিস্ট্রার নকল নিবন্ধন ফরমে সই নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করছে। পরে যখন ছাত্রীদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে তখন রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। ফলে আইন করেও কৌশলের কারণে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান, করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গোপনে কিছু বাল্যবিয়ে হয়েছে। তবে সেই সংখ্যা এতো বেশি নয়। তারপরও আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা ওই বিদ্যালয়ে ২৫টি বাল্যবিয়ের বিষয়ে জানতে পেরেছি। এখনো অনুসন্ধান চলছে। তবে শুধু এই একটি স্কুলে নয়, জেলার প্রায় সব স্কুল থেকেই এমন অভিযোগ আসছে। বাস্তবে বাল্যবিয়ের এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন তিনি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই