পায়রা সেতুতে অস্বাভাবিক টোল

  • বরিশাল ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২১, ০২:২৮ পিএম

বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলবাসীর বহুল কাঙ্ক্ষিত পায়রা সেতু উদ্বোধনের প্রথম দিনেই নির্ধারিত টোল নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ফেরির ভাড়ার চেয়ে ক্ষেত্র বিশেষে আড়াই থেকে সাড়ে সাতগুণ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে টোল।

এতে বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে সড়কপথে ভাড়া বাড়বে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও যাত্রীরা। ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা টোল পুনর্বিবেচনার আবেদন স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তবে তাতে সাড়া মেলেনি।

রোববার ও সোমবার (২৫ অক্টোবর) পায়রা সেতুর টোল প্লাজায় অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে পরিবহন চালক-শ্রমিকদের। এ নিয়ে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্সের কর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হতেও দেখা গেছে।

বরিশালগামী দিয়া পরিবহনের চালক ছত্তার হাওলাদার বলেন, বাসে সাড়ে তিনগুণ বেশি টোল নির্ধারণ করেছে। ফেরিতে আমরা ভাড়া দিতাম ৯৫ টাকা। তাতে লেবুখালী পারাপার হতে ১৯০ টাকা খরচ হতো। এখন টোল নির্ধারণ করেছে ৩৪০ টাকা।

এস আর পরিবহনের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বাসগুলোতে তেমন যাত্রী হয় না। তার ওপর এত বেশি টোল ধরা হয়েছে। এভাবে হলে আমাদের ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

ট্রাকচালক সুমন বলেন, ফেরিতে ভারী ট্রাক ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। সেতুতে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৭০০ টাকা। আগের খরচের চেয়ে সাড়ে সাতগুণ টোল ধরা উচিত হয়নি।

থ্রি-হুইলার হারুন পঞ্চায়েত বলেন, আগে ১০ টাকা নিয়ে ফেরি পার হতাম। এখন সেখানে ৪০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। অথচ আমাদের গাড়িতে ছয়জন যাত্রী বসাতে পারি। তাতে ভাড়া পাই ৬০ টাকা। এক লাফে তিন-চার গুণ বেশি আদায় আমাদের ওপর জুলুম।

জানা গেছে, ফেরিতে ভারী ট্রাকের ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। পায়রা সেতুতে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। যা ফেরি ভাড়ার সাড়ে ৭ গুণ বেশি। বড় বাসের ফেরি ভাড়া ছিল ৯৫ টাকা, সেতুতে তা নির্ধারিত হয়েছে ৩৪০ টাকা। মাইক্রোবাসের ৪০ টাকার ফেরি ভাড়া হয়েছে ১৫০ টাকা। ফেরিতে ট্রেইলারের ভাড়া ছিল ৩৭৫ টাকা, সেতুতে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪০ টাকা। মাঝারি ট্রাকে ফেরি ভাড়া ছিল ৯৫ টাকা, সেতুতে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭৫ টাকা।

রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, পায়রা সেতুতে অতিরিক্ত টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। টোল পুনর্বিবেচনা করে নির্ধারণের জন্য বরিশাল বিভাগের সব জেলার মালিক-শ্রমিক সমিতি সেতু কর্তৃপক্ষকে আলাদা আলাদাভাবে চিঠি দিয়েছে।

বরিশাল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সালাম বলেন, পায়রা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য থেকে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অনেক উপকার হয়েছে। পায়রা বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া বাড়বে। কিন্তু পায়রা সেতুতে যে টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমাদের সাধ্যের বাইরে।

সড়ক ও জনপথ পটুয়াখালী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ খান বলেন, নির্ধারিত টোল ফি সর্ম্পকে সবারই আপত্তি উঠেছে। অনেকেই দাবি তুলেছেন টোল কমানোর। আমরাও বিবেচনা করছি। যদিও বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে।

প্রসঙ্গত, রোববার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি ১৩০০ এর বেশি শ্রমিক পাঁচ বছর কাজ করে নির্মাণ করেছেন সেতুটি। তবে প্রকল্প অনুমোদন থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত ৯ বছরের মতো সময় লেগেছে সেতু চালু হতে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই