ঝালকাঠি : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ‘এমভি অভিযান-১০’ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মৃতদের মধ্যে ৩৩ জনের লাশ বরগুনায় পৌঁছেছে। চারজনের লাশ ঝালকাঠি থেকেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে লাশবাহী ট্রাকে করে মরদেহগুলো বরগুনা সদর হাসপাতালে এসে পৌঁছায়।
এসময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বরগুনা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। স্কাউটসের স্বেচ্ছাসেবকরা গাড়ী থেকে লাশগুলো নামিয়ে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখে।
আজ শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জালাল উদ্দীনের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ৩৩টি মৃতদেহ বরগুনা সদর হাসপাতালে আনা হয়।
তিনি বলেন, লাশগুলো সার্কিট হাউজ মাঠে নেওয়া হয়েছে। জানাজা শেষে বেলা ১২টার দিকে লাশ গণকবর দেওয়া হবে। বেলা ১১টার আগে কেউ মরদেহ শনাক্ত করলে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লাশগুলো বেশিরভাগ পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চিনতে পারছেন না স্বজনরা। মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বরগুনায় আনা মরদেহের মধ্যে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- বরগুনা সদরের আমতলী নিমতলী এলাকার জাহানারা ও বরগুনা সদরের লেমুয়া খাজুরা এলাকার যমজ দুই বোন লামিয়া ও সামিয়া।
এদিকে ঝালকাঠি জেলা প্রসাশক কার্যালয়ের সরকারী কমিশনার বশির গাজী বলছেন, তারা ঝালকাঠি থেকে ৩৬ জনের লাশ বরগুনায় পাঠিয়েছেন। আর একজনের লাশ পাঠানো হয়েছে বরিশাল থেকে।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে ঝালকাঠির সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে ৩৬ লাশ ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বরগুনা- ২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের কাছে হস্তান্তর করেন।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, এর মধ্যে চারজনের লাশ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরা হলেন- বরগুনা জেলা পাথরঘাটা উপজেলার মৃত হোসেন আলীর ছেলে আব্দুল রাজ্জাক মাস্টার (৬২), বরগুনার বেতাগী উপজেলার আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. রিয়াজ হাওলাদার (৩৫), বরগুনার বামনা উপজেলার সঞ্জিব চন্দ্রের ছেলে স্বপ্লীল চন্দ্র (১৪), ও বামনা উপজেলার জাহানারা বেগম (৪৫)।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নলছিটির সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
শুক্রবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে পোড়া লঞ্চ আর নদী থেকে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় দগ্ধ এক শিশুর। আর ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের।
সোনালীনিউজ/এমটিআই