নাটোর : প্রাথমিকভাবে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিক্ষিকা ও ছাত্রের প্রেমের কাহিনী ছড়িয়ে পড়লে দুজনই বিষয়টিকে পজিটিভ নিয়েছিলেন। কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তাদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি বহুল আলোচিত-সমালোচিত হয়। মানসিক চাপের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন কিনা তা তদন্ত করে দেখছি বলে জানিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা।
রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে ওই শিক্ষিকার মরদেহ উদ্ধারের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার।
আরও পড়ুন : সেই শিক্ষিকার মৃত্যু নিয়ে যা বললেন পুলিশ সুপার
এদিকে প্রথম স্বামীর সঙ্গে শিক্ষিকা খায়রুন নাহার (৪০) মোবাইলে কথা বলতেন। এ বিষয়ে স্বামী মামুন (২২) (দ্বিতীয় স্বামী) বহুবার নিষেধ করেছেন। কথা না শোনায় উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ নিয়ে শনিবার (১৩ আগস্ট) স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় মামুনের।
রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে আটক মামুনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
আরও পড়ুন : মন্তব্যই কী গন্তব্য আটকে গেলো মামুনের!
এ বিষয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আলী জানান, খবর পেয়ে সিআইডির একটি দল রাজশাহী থেকে রওনা দিয়েছে। তারা মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠাবে।
রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে নাটোর শহরের বালারিপাড়া এলাকার হাজি নান্নু মোল্লা ম্যানশনের চার তলার একটি ফ্ল্যাটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কের পর ছাত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ওই কলেজ শিক্ষিকার মরদেহ পাওয়া যায়। ওই বাসায় ভাড়ায় থাকতেন তিনি।
খায়রুন নাহার নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
এর আগে শনিবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে গলায় ফাঁস নিয়ে শিক্ষিকা খায়রুন নাহার আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন স্বামী মামুন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাত ৩টার দিকে মামুন প্রতিবেশীদের ডেকে এনে বলেন, তার স্ত্রী খায়রুন নাহার গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবেশীরা তার ঘরে গিয়ে দেখতে পান খায়রুন নাহারের নিথর দেহ ঘরের মেঝেতে শোয়ানো। এতে তাদের সন্দেহ হলে মামুনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন তারা।
নাটোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া মামুনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত এক বছর আগে ফেসবুকে শিক্ষিকা নাহারের সঙ্গে একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র মামুনের পরিচয় হয়। পরে তাদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন তারা।
কিন্তু বিয়ের ৬ মাস পর তাদের সম্পর্ক জানাজানি হলে ছেলের পরিবার মেনে নিলেও মেয়ের পরিবার থেকে বিয়ে মেনে নেয়নি। এর আগে ওই শিক্ষিকার বিয়ে হয়েছিল রাজশাহী বাঘায়। সেখানে পারিবারিক কলহে সংসার বেশি দিন টেকেনি। প্রথম স্বামীর ঘরে এক সন্তান রয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ