কুমিল্লায় প্রান্তিক জনপদে সাড়া ফেলেছে বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর

  • কুমিল্লা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২, ১২:৪১ পিএম

কুমিল্লা: কুমিল্লার প্রান্তিক জনপদের রেলস্টেশনগুলোতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর বেশ সাড়া ফেলেছে। তিন দিনে জাদুঘর পরিদর্শনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থীসহ তরুণপ্রজন্মের উপস্থিতি লক্ষণীয়। ব্যতিক্রম ভ্রাম্যমাণ এ জাদুঘর দেখে তারাও উৎফুল্ল। বঙ্গবন্ধুর জীবনী, আন্দোলন ও সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানাতে এ জাদুঘর অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যতিক্রমধর্মী ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দেশে এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। এ জাদুঘরে ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। কোচের এক প্রান্তে থাকা একটি বড় এলইডিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। যা দেখে নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে।

জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, ১ আগস্ট দেশে প্রথম উদ্বোধন হয় রেল জাদুঘরের। এরপর থেকে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটির যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে। সেখানে ১ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট অবস্থান করে। এরপর ভাটিয়ারী, সীতাকুণ্ড, চিনকি আস্তানা, ফেনী ও নাঙ্গলকোট রেলস্টেশনে অবস্থান শেষে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাতে লাকসাম রেলওয়ে জংশন স্টেশনে পৌঁছে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল ১০টায় জাদুঘরটি উন্মুক্ত করা হয়। খবর পেয়ে লাকসামের তরুণ প্রজন্ম উৎস উদ্দীপনা নিয়ে ভিড় জমায়। লাকসামে জাদুঘরটি তিন দিন অবস্থান করে। এরপর জাদুঘরটি নোয়াখালীর চৌমুহনী ও মাইজদীকোর্ট স্টেশনে নেওয়া হয়।

রেলওয়ের লাকসাম বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কিশোর চন্দ্র দেববর্মা বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে রাখা হয়েছে জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ। বইগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বই। ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ ছয়টি চিঠি রাখা হয়েছে। দর্শকদের নজর কাড়ার জন্য ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগান। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোশাক ও জিনিসপত্রের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, স্মৃতিসৌধ, তার হাতে লেখা চিঠি। জাদুঘরটিতে রয়েছে একটি ডিসপ্লে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এর পেছনে বেজে চলে ‘তুমি ইতিহাসজুড়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক, এ বাংলার তুমি শোষকের জম শোষিতের দম স্রষ্টা স্বাধীনতার’।

তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে কর্মকর্তা মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর লেখা গানটি জাদুঘরে থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর কোচের বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ওপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরাল চিত্র।

পরিদর্শনে আসা একাধিক তরুণ শিক্ষার্থী জানায়, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দেখতে পাবে তারা কখনো কল্পনাও করেনি। জাদুঘর ঘুরে বহু অজানা তথ্য তারা জানতে পেরেছে।

লাকসাম পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খলিলুর রহমান রোববার (২১ আগস্ট) লাকসাম রেলস্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সব ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরে। এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।

লাকসাম জংশন স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন বলেন, নাঙ্গলকোট থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি শুক্রবার রাতে লাকসাম পৌঁছে। শনিবার সকাল ১০টা থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে ঘটে যাওয়া সব বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরে। এটি নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে সহায়তা করবে।’

সোনালীনিউজ/এএন/এসআই