ত্রিশাল: আরব দেশের স্টাইলে চা তৈরি করে রাজা এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।
আজহার উদ্দিন রাজা মিয়া ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল পৌর শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের নওধার গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র আলীম উদ্দিনের ছেলে।
তার নাম কিন্তু রাজা ছিল না। আজহার উদ্দিন লোক মুখে প্রচার পেয়ে হয়ে উঠেছেন রাজা মামা। ব্যতিক্রমি চা বিক্রি করার স্টাইল এসবের জন্যই ভালোবেসে মানুষ তাকে রাজা মামা বলে ডাকতে শুরু করেন। এখন সে এই নামেই পরিচিত।
রাজা মিয়া জানান, ঢাকা বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে তার ১৮টি চায়ের দোকান রয়েছে। তার মাসিক আয় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। তার দোকানে চা পান করতে বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও আসেন এবং চা পান করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
অথচ চা বিক্রি করে রাজার এভাবে বিখ্যাত হয়ে উঠার পিছনে রয়েছে দুঃখ-কষ্টের জীবনকাহিনী। ত্রিশালের খেটে খাওয়া রাজাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি কোন প্রতিবন্ধকতাই। সে এখন খেঁটে খাওয়া মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত।
রাজা মিয়া জানান, তার ১৮টি স্টলে এখন ৬৫ জন বেতনভোগী কর্মচারি কাজ করেন। তাদের প্রত্যেককে ১২ থেকে ২২ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন তিনি। যে কিনা একদিন নিজেই খোঁজে ফিরেছে কর্ম, সেই এখন চাকরি দিচ্ছে বেকারদের। এ এক অনন্য উদাহরন। তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। তার স্বপ্ন এখন আকাশ ছোয়া।
রাজা মামা বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ দেশের মানুষের নিকট। দেশের মানুষ আমার তৈরি চা খেয়েছেন যার কারণে আমি আজ এতো উপরে উঠতে পেরেছি। আজকে দেখুন আমি একটা ভ্যান গাড়ি থেকেআজ ১৮ টি স্টলের মালিক।’
রাজা বলেন, ‘জন্মভূমি ত্রিশালের মাটিতে পথে-ঘাটে ফেরি ব্যবসা করেছি, ভ্যান গাড়ি রিক্সা চালিয়েছি, কুলির কাজ করেছি। বেঁচে থাকার জন্য ক্ষেতের ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করেছি। আজ আমার দেশের মানুষ আমাকে স্বপ্নের পরিণত করে দিয়েছেন। এখন আমি অনেক কিছু করতে পেরেছি। বাবার একটা কুড়ে ঘর ছিল তাকে তিন তলা একটি বাড়ী করে দিয়েছি। আপনারা আমাকে সফলতা এনে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন চলতি বছরের ঢাকায় বাণিজ্য মেলায় যেখানে বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানি সেখানে প্রতিযোগিতা করে সেখানে আমি চা বিক্রি করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি।’
রাজার বাড়ির পার্শ্ববর্তী মানিক নামে একজন জানান, রাজার জীবনযুদ্ধ বেদনার পাশাপাশি যথেষ্ট অনুপ্রেরণার। রাজা একসময় বাসা-বাড়িতে কাজ করা থেকে শুরু করে গাড়িতে ফেরি করে পান, সিগারেট, চকোলেটও বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি কিছুটা পড়াশোনাও করেছেন। এ অল্প আয় থেকেই তাঁর বাবা আলীম উদ্দিনকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অন্যের বাড়িতে গরু দেখাশোনার পাশাপাশি চাষাবাদের কাজও করেছেন। একপর্যায়ে তার পরিচিত একজনের পরামর্শে ঢাকায় গিয়ে বড়ই( কুল) বিক্রি শুরু করেন রাজা। তখন তাকে বিমানবন্দর এলাকার পাবলিক টয়লেটের ছাদেও রাত কাটাতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সে আরেকজনের সহযোগিতায় বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন দেশের শেফদের দেখে দেখে চা বানানোর কৌশল রপ্ত করে। একদিন রাজা হোটেল থেকে পালিয়ে বের হলে আবুধাবির পুলিশ তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেন। ওই সময় মানুষ বিদেশ থেকে সোনার গহনা আনলেও তিনি বিদেশ থেকে একটি চায়ের কেটলি এনে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় চায়ের দোকান দেন। এখন সে একজন সফল উদ্যোক্তা। সে এবছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পুরষ্কার হিসেবে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন।
সোনালীনিউজ/এম