গাজীপুর : সুউচ্চ শেডের নিচে বাঁধা নানা রঙের নানা জাতের সুন্দর-সুঠাম-দৃষ্টিনন্দন গবাদি পশু―গরু, ভেড়া, মহিষ, দুম্বা, গাড়ল আর খাসি। এ সব পশু আসছে কোরবানি ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি গরুর ওপরে চলছে বৈদ্যুতিক পাখা। নানা ভঙ্গিতে শুয়ে বসে আরাম করছে পশুগুলো।
একদিকে চলছে পশু গোসলের ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ অন্য দিকে চলছে খাবার যোগান। শ্রমিকদের ব্যস্ততা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সৌখিন মানুষ কোরবানির পশু পছন্দের জন্য খামারে খামারে ছুটছেন।
সমাজমাধ্যম বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে খোঁজ নিয়েই কোরবানির পশু পছন্দে তৎপর তারা। তবে সব কর্মযজ্ঞ আর ব্যস্ততা ছাপিয়ে সবার নজর কাড়ছে খামারের সাদা আর গোলাপি মহিষ। বিত্তশালী আর সৌখিন মানুষেরা সেদিকে ছুটছেন। তারা পছন্দ করছেন বিচিত্র সাদা আর গোলাপি মহিষ। গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি খামারে এমনি চিত্র চোখে পড়েছে। ওই খামারে অন্তত ৩০টি মহিষ রয়েছে এমন বিচিত্র রঙের। তার মধ্যে ২৫টি সাদা রঙের অপর ৫টি হালকা গোলাপি রঙের। এরই মধ্যে বেশ ক'টা বিক্রি হয়ে গেছে বলেও খামার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। বেশ দামি হলেও সৌখিন মানুষ দিন দিন এ মহিষে নজর দিচ্ছেন। গত কয়েক বছরে বেশ ক্রেতা বেড়েছে এ বিচিত্র মহিষের। এতে খামারিরাও এ মহিষ পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাদের দাবি, এলবিনো প্রজাতির এ মহিষে ক্রেতার আকর্ষণ বাড়ছে দিন দিন।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের ডিজাইন অ্যাগ্রো পার্ক নামের ওই খামারে তিন শতাধিক কোরবানির পশু রয়েছে। এ খামারে অন্তত ২৫ জন শ্রমিক নানাভাবে কাজ করছেন। রাজিউল হাসান গড়ে তুলেছেন খামারটি।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক দশক ধরে এখানে এ খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। শুরুতে অল্প পশু থাকলেও এখন অন্তত তিন শতাধিক গরু, মহিষ আর ছাগল, ভেড়ার খামার এটি। এতে এলাকার বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা আরও বলেন, এ খামারে সাদা ও গোলাপি মহিষ রয়েছে। প্রতিদিন মানুষ (ক্রেতা) আসেন পশু কিনতে। এ সময় রঙিন মহিষে সবার নজর পড়ে।
খামার মালিক রাজিউল হাসান জানান, আমাদের ডিজাইন অ্যাগ্রো ফার্মে ২৫টি সাদা ও ৫টি হালকা গোলাপি মহিষ রয়েছে। এ ছাড়াও আসছে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে আমারে প্রস্তুতিতে নানা বয়সের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া আর দুম্বা রয়েছে। আমাদের কালেকশনে প্রায় পাঁচ শ পশু রয়েছে। তবে সব পশুই এ ঈদের বিক্রি হবে না। আগামীর জন্যও কিছু প্রস্তুত করছি।
তিনি আরও বলেন, খামারটি শখ করে শুরু করে এখন বাণিজ্যিক আকারে চলছে। প্রায় দেড় দশক ধরে গবাদি পশু নিয়ে ভিন্ন একটা আনন্দের জগৎ আছে আমাদের। নিয়মিত প্রশিক্ষিত কর্মীরা এসবের যত্নে কাজ করে। প্রয়োজনে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সহায়তা নেওয়া হয়।
শ্রমিকরা জানান, প্রত্যেক গরু-মহিষের ওপর বিদ্যুৎ-চালিত ফ্যান চলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। নিয়ম করে প্রতিদিন দুই বেলা এদের গোসল করানো হয়। নিয়ম করে খাবার দেওয়া হয়। অন্তত ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করে নিয়মিত। খামারে বনগরু বা গয়াল, ৯০০ ছোট-বড়-মাঝারি গরু, খাসি দুম্বা ও গাড়ল রয়েছে।
খামার ব্যবস্থাপক রিয়াজুল হাসান রিয়াজ জানান, সাদা ও গোলাপি মহিষের বেশ চাহিদা রয়েছে। সাধারণ কালো রঙের মহিষের তুলনায় এদের দামও বেশি। ইতিমধ্যে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বেশ কয়েকটি মহিষ বিক্রি হয় গেছে। সাদা ও গোলাপি মহিষের ওজন ও উচ্চতাও বেশি হয়। একেকটির ওজন ৬৫০ থেকে ৮০০ কেজি হয়ে থাকে। খামারে থাকা মহিষগুলো ৪ থেকে ৬ দাঁতের। বয়স ৩ বছরের বেশি। সম্প্রতি একটি মহিষ বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ টাকায়। তিনি আরও বলেন, খামারের নিজস্ব ওয়েবসাইট, সমাজমাধ্যম ও সরাসরি খামার থেকে কোরবানির পশু বিক্রি করা হচ্ছে। দেশে খুব কম খামারেই সাদা ও গোলাপি মহিষ রয়েছে। তার মধ্যে আমাদেরটা সেরা।
শ্রীপুর উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আলী আকরব জানান, বিভিন্ন প্রাণী জিনগত কারণে সাদা রঙের হয়ে থাকে। যেকোনো প্রাণীর ক্ষেত্রেই এমনটি হতে পারে এগুলোকে এলবিনো বলা হয়। তবে মাংসা উৎপাদন বা স্বাদে কোনো তারতম্য হয় না।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আতিকুর রহমান জানান, এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে আমাদের উপজেলায় চাহিদার বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের চাহিদা আছে ১৬৫২৬টি আর প্রস্তুত আছে ১৮৫৩৬টি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই