রংপুর: বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ অতঃপর কিশোরী জন্ম দিয়েছে ফুট ফুটে কন্যা সন্তান। চারদিন বয়সের নবজাতক কন্যা সন্তানকে কোলো নিয়ে সন্তানের পিতৃত্ব ও স্ত্রীর দাবিতে আপন চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে অনশনে বসেছেন এসএসসি পরিক্ষার ফল প্রার্থী এক কিশোরী। জন্মের পর মেয়েটির পিতা ভারতে চলে যায় এবং মা মানসিক ভারসাম্যহীন।
ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কূর্শা ইউনিয়নের শিবু কামারপাড়া দৈইটারী গ্রামে।
ভুক্তভোগি কিশোরী শনিবার (১৭ জুন) অনশনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগি নাবালিকা। সে শুক্রবার (১৬ জুন) রাত থেকে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছে। ওই কিশোরীর বাড়ী পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগরের জাদু লস্কর গ্রামে এবং অন্নদানগরে স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
অভিযুক্ত যুবকের নাম আপন চন্দ্র বর্মন (২০)। তিনি কাউনিয়া উপজেলার কূর্শা ইউনিয়নের শিবু কামারপাড়া গ্রামের শ্রী অবিনাশ চন্দ্র বর্মনের ছেলে এবং স্থানীয় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী কিশোরী জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আপন চন্দ্র বর্মনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর তাদের দুইজনকে মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের সুযোগে প্রেমিক আপন চন্দ্র বর্মন তার বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন। আর এই সুযোগে আপন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এতে সে অন্তসত্বা হয়ে পরে। তবে সে অন্তসত্বার বিষয়টি বুঝতে পারেনি। পরে সে বুঝতে পারলে প্রেমিক আপনকে জানালে সে অন্তসত্বার বিষয়টি অস্বীকার করে।
বুধবার (১৪ জুন) সন্তান প্রসবের ব্যাথা উঠলে তাকে প্রথমে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন তাকে রংপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে ওই কিশোরী একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেন।
বুধবার রাতেই প্রেমিকের পরিবারকে জানালে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে। এরপর থেকে অভিযুক্ত আপন চন্দ্র বর্মন গা ঢাকা দিয়েছে। পরে উপায় না পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ওই কিশোরী নবজাতক মেয়েকে নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন শুরু করে।
শনিবার দুপুরে শিবু কামারপাড়া দৈইটারী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রেমিক আপনের বাড়ির বেলকুনি ঘরে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছে। পাশে রয়েছে চারদিন বয়সের নবজাতক মেয়ে সন্তান।
ওই কিশোরী বলেন, আমি সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই। আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমি এই সমাজে কিভাবে সন্তানের পরিচয় দিব। আমার কি হবে। আপন আমাকে বিয়ের কথা বলে শুধু কালক্ষেপন করেছে। আপন স্ত্রী হিসেবে মেনে না নিলে আমার এখন মৃত্যু ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।
কুর্শা ইউনিয়নের সাত নাম্বার ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, শুক্রবার রাতে ওই কিশোরী বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিল। পরে আপনের বোন মেয়েটি ও নবজাতক সন্তানকে বেলকুনি ঘরে নিয়ে যায়। ছেলে-মেয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। সমাধান না হলে আইনি ব্যবস্থার পরামর্শ দেওয়া হবে।
আপনের পিতা অবিনাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমার কোন আপত্তি নেই। মেয়েটি যে সন্তানকে নিয়ে এসেছে। সেটা যে আমার ছেলের তার প্রমাণ কি। প্রমান দিতে পারলে আমি সামাজিকভাবে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেব। মেয়েটি যেহেতু একটি সন্তানকে নিয়ে বৃষ্টিতে আমার বাড়িতে এসেছে তাই মানবতার খাতিরে বেলকুনি ঘরে আশ্রয় দিয়েছি। তবে ঘটনা জানার পর থেকে তার ছেলে বাড়িতে আসে নাই।
এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে মুঠোফোন কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোন্তাসির বিল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সোনালীনিউজ/এ/এসআই