দরপত্রে মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার নির্দেশনা, চলছে তাজা গাছ কাটার মহোৎসব!

  • ঈশ্বরদী (পাবনা)  প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩, ০২:৫৩ পিএম

ঈশ্বরদী: পাবনায় সড়ক ও জনপদের নিলাম দরপত্রে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার নির্দেশনা রয়েছে; কিন্তু এর বাইরে জীবিত গাছও কাটা হচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে তাজা গাছ কাটার মহোৎসবে চলছে। আবার মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ (সড়কের বাঁকে থাকা) গাছগুলোর মধ্যে বেশকিছু গাছ বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

এর আগে গত জুনেও পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ঈশ্বরদীর বহরপুর থেকে দাশুড়িয়া অংশে মরা গাছের সঙ্গে তাজা গাছ কেটে ফেলা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদের অধীনে নিলামের মাধ্যমে মোট ছয়টি প্যাকেজে মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে পঞ্চম প্যাকেজে রয়েছে পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের পাবনার গাছপাড়া পৌরসভা গেট থেকে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি রেলগেট পর্যন্ত ৭১টি গাছ। এক লাখ ৯০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ নিলামে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সর্বমোট দুই লাখ ২৩ হাজার ২৫০ টাকা সরকারকে দিয়ে গত ১৩ আগস্ট গাছকাটার অনুমতি পায় দিনাজপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর ট্রেডার্স। সেখানে ৭১টি গাছের গড় মূল্য তিন হাজার ১৪৪ টাকা।

কার্যাদেশের তারিখ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে গাছ কাটতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ সব গাছ কাটা শেষ হয়নি নির্ধারিত সময়ে। কিন্তু দরপত্রের বাইরের বেশকিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে ও হচ্ছে। এর মধ্যে একটি তাজা কড়ইগাছের ডাল কেটে গাড়িতে তোলা হয়েছে, গাছটি রয়েছে কাটার অপেক্ষায়। গাছটির বর্তমান বাজারদর হবে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার যেখানে একটি গাছ কাটলে ১০টি গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছে, তখন কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তার জোগসাজশে মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ নিলামের কথা বলে এর বাইরে জীবিত গাছও কেটে ফেলা হচ্ছে। সড়কের পাশে ও পুকুরের পাশের গাছও কাটা হচ্ছে। এতে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে গাড়ি পুকুরে পড়ে ক্ষতির মাত্রা বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। দ্রুত গাছকাটা বন্ধ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর ট্রেডার্সের ম্যানেজার মেহেদী হাসান বাবু বলেন, ‘সিরিয়াল অনুযায়ী নিয়ম মেনেই গাছকাটা হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে হলে আফিসে আসেন।’

পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, মহাসড়কের বাঁকে ও পাশে যেসব গাছ ঝুঁকিপূর্ণ ও মৃত সেসব গাছ নিয়মমাফিক নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। তবে ঠিকাদার নিলামকৃত গাছের বাইরে তাজা গাছ কাটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাজা গাছ কাটার বিষয়ে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, বিভিন্ন জনের অভিযোগ পেয়েছি আমরা সরেজমিনে দেখছি মরা গাছ কাটার বদলে অনেক তাজা গাছ কেটে ফেলেছে । আমরা পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে লিখিত আকারে অভিযোগ করব, যাতে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এমএস