বইপ্রেমী জামালের উদ্যোগে সারাদেশে ১২’শ সেলুন লাইব্রেরী

  • সজিব আলম, লালমনিরহাট | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৩, ০৩:৫৫ পিএম

লালমনিরহাট: চুল-দাঁড়ি কাটাতে গিয়ে সেলুনে সিরিয়াল দিয়ে অলস সময় পার করেন অনেকেই। কিন্তু এই অলসতার সময়কে কাজে লাগিয়েও যে জ্ঞানার্জন সম্ভব তারই এক বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরেছেন  লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার জামাল হোসেন। অবসরে বই পড়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে প্রথমে নিজ এলাকায় ছোট পরিসরে গুটি কয়েক সেলুন লাইব্রেরী স্থাপন শুরু করলেও আজ সারাদেশের মোট ৩০টি জেলায় এর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২৩৪টি। এর মধ্যে শুধু লালমনিরহাট জেলায় রয়েছে ৫০টি সেলুন লাইব্রেরী। এছাড়াও তিনি  নিজ এলাকায় লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো বিস্তার সহ শিক্ষিত সমাজ গড়তে এক অরণ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

তরুণ উদ্যোক্তা জামাল হোসেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।  বাল্যকাল থেকেই ঘুরাঘুরি, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি না করে বইয়ের প্রতি অসাধারণ প্রেম থেকে তিনি এ উদ্যোগ নিয়ে অন্যকে বই পড়তে আগ্রহী করে তুলছেন। জ্ঞানার্জনের তাগিদ থেকেই সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠা করেছেন মোট ১২৩৪ টি সেলুন লাইব্রেরী।

সেলুনে বসে অযথা সময় নষ্ট না করে জ্ঞানচর্চার এমন চিন্তা থেকেই ২০১৬ সালে নিজ এলাকায় ব্যতিক্রম এই উদ্যোগ গ্রহণ করে গত ৭ বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। ইন্টারনেট ও স্মার্ট মোবাইল ফোনেট এই যুগেও তার প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভীড় লেগেই থাকে।

লালমনিরহাট শহরের কলেজ রোড এলাকার সেলুন মালিক নন্দকুমার শীল জানান, ‘সেলুন লাইব্রেরি আমার এবং গ্রাহকদের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ। এখন আমার অবসর সময়কে সঠিক কাজে লাগাচ্ছি। সেলুনে যারা আসেন তারাও এখানে রাখা বই পড়েন।’ প্রতি সপ্তাহে নানা বিষয়ের ১০টি বই সরবরাহ করেন জামাল।

শিক্ষার্থী জামাল হোসেন বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় কমপক্ষে ১০০টি সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি বাস্তবায়ন করব। আমি টিউশন থেকে যা উপার্জন করি সেই টাকা ও কিছু বন্ধুর সহায়তায় সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি দেখেছি মানুষ সেলুনে এসে অহেতুক সময় নষ্ট করে। আমিও একদিন সিরিয়ালের জন্য সেলুনে ৩ ঘণ্টা সময় অহেতুক নষ্ট করেছি। তাই ভাবলাম, সেলুনে যদি বই রাখি কেমন হয়, সে চিন্তা থেকে আমি সেলুন লাইব্রেরি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমি মনে করি, এতে মানুষ জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবে।’

তরুণ উদ্যোক্তা জামাল হোসেন ২০১৪ সালে সারপুকুর যুব ফোরাম নামে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু করেছিলেন মাত্র ১০টি বই দিয়ে। তবে এখন সেখানে আছে ৬ হাজার বইয়ের সংগ্রহ। বইয়ের পাশাপাশি দুটি জাতীয় দৈনিক, একটি আঞ্চলিক দৈনিক এবং একটি চাকরি সংক্রান্ত পত্রিকাও নিয়মিত রাখা হয়।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, জামালের অনন্য এই উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে সহযোগীতার অংশ হিসেবে  লাইব্রেরী কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে যখন সবাই ভার্চুয়ালি বিভিন্ন বিষয়ে ডুবে থাকে সে সময় জামালের বইপ্রীতির বিষয়টি জেলা জুড়ে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে ।

এমএস