‘মাত্র আধা মিনিট সময় পেলেই মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটত না’

  •  ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৩, ০১:২৭ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আন্তঃনগর এগারসিন্ধুর ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়া কনটেইনার ট্রেনের চালক সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করায় সংঘর্ষ হয়। এগারসিন্ধুর ট্রেনটি আর মাত্র আধা মিনিট সময় পেলেই মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটত না বলে জানিয়েছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টায় এসব কথা বলেন স্টেশন মাস্টার।

এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৪টায় রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে ঢাকাগামী এগারসিন্ধুর ট্রেনের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কনটেইনার ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে এগারসিন্ধুর ট্রেনের তিনটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে দুইটি বগি সম্পূর্ণভেবে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনার পরপরই পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দুর্ঘটনায় মোট ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আহত শতাধিক যাত্রীকে ভর্তি করা হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, এগারসিন্ধুর বৈধ সিগন্যাল পেয়েই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। কিন্তু কনটেইনার ট্রেনের চালক সিগন্যাল না দেওয়া সত্ত্বেও স্টেশনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। আর যদি অন্তত আধা মিনিট সময় পেতো এগারসিন্ধুর ট্রেনটি- তাহলে হয়ত দুর্ঘটনাটি ঘটত না।

স্টেশন মাস্টার বলেন, কনটেইনার ট্রেনের চালক হোম সিগন্যাল অমান্য করেছে। কোনো একটি ট্রেনকে স্টেশনে ঢুকতে হলে দুইটি সিগন্যাল অতিক্রম করতে হয়। প্রথমটি আউটার এবং দ্বিতীয়টি হোম সিগন্যাল। কনটেইনার ট্রেনটিকে আউটার সিগন্যালের বাইরে অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়েছিল। এগারসিন্ধুর ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর কনটেইনার ট্রেনটিকে আসার জন্য সিগন্যাল দেওয়া হতো। অনেক ট্রেন ধীরে ধীরে আউটার সিগন্যাল অতিক্রম করে ফেলে। তবে হোম সিগন্যালে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। কিন্তু কনটেইনার ট্রেনের চালক কোনো সিগন্যাল অতিক্রম করতে বলা হয়নি। এগারসিন্ধুর ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরই পয়েন্ট ফ্রি হয়ে যেতো। তারপর পয়েন্ট পরিবর্তন করে কনটেইনার ট্রেনটিকে সিগন্যাল দেওয়া হতো স্টেশনে ঢোকার জন্য।

এদিকে, দুর্ঘটনার পরপরই কনটেইনার ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক এবং গার্ডকে বরখাস্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আলীম হোসেন সিকদার জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে আসা এগারসিন্ধুর ট্রেনটি ভৈরব স্টেশন যাত্রাবিরতি শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। স্টেশনের আউটার থেকে লাইন পরিবর্তন করে আরেক লাইনে প্রবেশ করছিল। তবে সম্পূর্ণ ট্রেনটি আরেক লাইনে প্রবেশের আগেই ওই লাইনে আরেকটি কনটেইনার ট্রেন ঢুকে পড়ে। এতে ট্রেনটির পেছনের দিকে সংঘর্ষ হয়।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব রেলস্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এগারসিন্ধুর ‘গোধূলী এক্সপ্রেস’কে পেছন থেকে আসা কার্গো ট্রেনটি ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে যাওয়ার পথে বাইরের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল যাত্রীবাহী ট্রেনটি।

সোনালীনিউজ/এম