গাজীপুর: গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায়। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত। নতুন নিম্নতম মজুরি প্রত্যাহারের দাবিতে এ শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক শ্রমিক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়। এ সময়ে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ও নাম না জানা আরও ৪ হাজার জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে কারগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এ মামলা ও শ্রমিকদের আদালতে পাঠানোর পর থেকেই এ শিল্পাঞ্চলের হাজার-হাজার পোশাক শ্রমিকেরা গণ গ্রেফতার আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েছে। সোনালী নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোশাক শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মামলা হওয়ার পর থেকেই শ্রমিকদের নানা ভাবে হয়রানি ও ভয় বৃত্তি প্রদর্শন করছে পুলিশ প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহল। এতে করে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল শ্রমিকদের মধ্যে গণ গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানাযায়, দেশের পোশাক শ্রমিকদের জন্য সরকার নুন্যতম মজুরি ঘোষণা করেছে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে এ দিন মজুরি ঘোষণার ৩ ঘন্টা পরেই দেশের গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন গুলো সরকার ঘোষিত এ নিম্নতম মজুরি প্রত্যাখান করেছে। এর পর বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকেই গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে এ মজুরি প্রত্যাখান করে কমপক্ষে ২০ টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা উত্তাল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেন। এ সময়ে পোশাক শ্রমিকরা গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় শ্রমিক-পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক শ্রমিকসহ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা আহত হয়।এ ঘন্টায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন মামলা না হলেও।
ওই দিন দুপুরের খাবারের বিরতির পর থেকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। প্রথমে কোনাবাড়ি বিসিক এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বেরিয়ে আসে। এরপর মিছিল করতে করতে আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে। তখন পুলিশে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিলে উত্তেজিত শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। তখন তুসকা গার্মেন্টস্ লিমিটেড নামের কারখানা শ্রমিকরাও রাস্তা নেমে এসে। বিকেল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলে।
এ ব্যাপারে র্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো: ইয়াসির আরাফাত হোসেন বলেন, শ্রমিকদের প্রথমে আমরা শান্ত থাকতে অনুরোধ করি। তারা অনুরোধ উপেক্ষা বিক্ষোভে নেমে নাশকতামূলক কাজ শুরু করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
গাজীপুর-২ শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন,আমরা সব সময় বিশ্বাস করি শ্রমিকরা শান্তি প্রিয়। তবে তাদেরকে কুচক্রী মহল সুযোগে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে সব সময় আমরা প্রথমে তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পরে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, পোশাক শ্রমিকদের জন্য চূড়ান্ত হওয়া মজুরি প্রস্তাব অনুযায়ী, মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। আর মূল বেতনের অর্ধেক হচ্ছে বাড়িভাড়া। এ ছাড়া খাদ্যভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা, চিকিৎসাভাতা ৭৫০ টাকা ও যাতায়াতভাতা ৪৫০ টাকা। প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে মজুরি বাড়বে। নতুন মজুরিকাঠামোতে সাতটি গ্রেডের বদলে পাঁচটি গ্রেড থাকবে। আগামী ১ ডিসেম্বর নতুন মজুরি কার্যকর হবে এবং জানুয়ারি মাসে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা।
সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই