রাজশাহী: রাজশাহীতে বরই খাওয়ার পর অসুস্থ দুই বোনের মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি অনুসন্ধানে ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে আসা তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল রাজশাহী এসে কাজ শুরু করেছে।
মারা যাওয়া দুই শিশুর নমুনা পরীক্ষার পর নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। এরপরই দেখা দেয় উদ্বেগ। তাদের মৃত্যুর পেছনে এখন ‘অজানা ভাইরাসের’ কথা বলছেন চিকিৎসকরা। তাই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেও তাদের বাবা-মাকে আইসোলেশনে (আলাদা) থাকতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনার পর সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘এখনই বলা যাচ্ছে না বরই খেয়ে নাকি অন্য কোনো কারণে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় কাঁচা রস ও বাদুড়ের খাওয়া বা আঁচড়ানো ফল না খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে আইইডিসিআর থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩০ নম্বর নিপাহ আইসোলেশান ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুর বাবা মঞ্জুর রহমান ও মা পলি খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন। তারা মারা যাওয়া দুই শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের রোগের কেস হিস্ট্রি শোনেন। এ ছাড়া মৃত দুই শিশুর পাকস্থলী থেকে সংগ্রহ করে রাখা নমুনা নেন তারা।
এ সময় রামেক হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা আইইডিসিয়ারের বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে কথা বলেন। এই তদন্ত দল হাসপাতাল থেকে জেলার চারঘাটে অবস্থিত রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে যান। সেখানে ওই দুই শিশু ও তাদের বাবা-মা যে কোয়ার্টারে থাকতেন, সেখানকার কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে তদন্ত দল দুই শিশুর পরিচর্যায় নিয়োজিত গৃহপরিচারিকার সঙ্গে এবং রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। তবে এ নিয়ে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ টিম সংবাদমাধ্যমে কোনো মন্তব্য জানানি। গবেষণা শেষে এ বিষয়ে ফলাফল জানানো হবে বলে জানান তারা।
[217853]
এদিকে, হাসপাতালের ৩০ ওয়ার্ডের আইসোলেশনে থাকা ওই বাবা-মাকে ছাত্রপত্র দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ বেলা ১১টার দিকে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ইনচার্জ ডা. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘গত রবিবার দুই শিশুর মায়ের শরীরে হালকা জ্বর ছিল। সোমবার তারা বেশ সুস্থ থাকায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়িতেও তাদেরকে আপাতত আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে। কেননা আমরা বলছি, বাচ্চা দুটি অজানা এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কিন্তু অজানা সেই ভাইরাসটি আসলে কী, সেটি কিন্তু এখন পর্যন্ত আইডেন্টিফাই করা সম্ভব হয়নি। ভাইরাস শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিবারের লোকজন থেকে আলাদা থাকতে বলা হয়েছে।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘মৃত দুই শিশু ও তার বাবা-মা আসলে কোনো অজানা রোগে আক্রান্ত কি না, তার সঠিক কারণ বের করা প্রয়োজন। তাই আইইডিসিআর’র তিন সদস্য অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহীতে কাজ করছেন। তারা সোমবার আমাদের এবং শিশু দুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে তারা কাজ করছেন। ঢাকায় পাঠানো আগের নমুনাও পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মৃত শিশুর পাকস্থলীর খাবারের নমুনা হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। এই নমুনাও তদন্ত টিম সংগ্রহ করেছেন। এটি ঢাকার ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে, খাবারে কোনো বিষক্রিয়া ছিল কি না।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসের গাছতলা থেকে বরই কুড়িয়ে এনে শিশু মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাশিয়াকে (৫) খেতে দিয়েছিলেন তাদের বাসার গৃহকর্মী। বরইগুলো ধোয়া ছিল না। বরই খাওয়ার পরের দিন হঠাৎ মারিশার গায়ে জ্বর আসে এবং বমি করতে থাকে। পরে ওই দিনই হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।
১৬ ফেব্রুয়ারি মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাশিয়াও মারা যায়। তাদের বাবার মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিতের প্রভাষক। বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) ও দুই মেয়েকে নিয়ে ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি।
এমএস