কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার শুরুর আগে হুবহু উত্তরপত্র পাওয়ার ঘঠনায় নরেচরে বসেছে প্রশাসন।
এ ঘটনায় নাগেশ্বরী নিউ প্রতিশ্রুতি নামক বেসরকারি স্কুলের পরিচালক ও তার এক শিক্ষককে নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার হলে অতিরিক্তি উত্তরপত্র রেখে চলে যাওয়ায় হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহছেনা আক্তারসহ দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন হল সুপার মোশারফ হোসেন।
[218341]
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষাকালে এ ঘটনা ঘটে। নাগেশ্বরী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ ও নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রূপ কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার এসএসসির ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগে একটি উত্তরপত্রের ছবি কিছু অভিভাবকের মোবাইলে ফোনে হোয়াটস অ্যাপ ম্যাসেঞ্জারে আসে। ছবিগুলো আসে সাংবাদিকদের কাছেও। পরে ছবি নিয়ে শুরু হয় নানা কথা।
ছবিটিতে দেখা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টা ৫৩ মিনিটে গ্যালাক্সি এটুয়েন্টিফোর একটি ফোন থেকে মঞ্জুর আলম নামে একজন তুলেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঞ্জুর আলম নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের শিক্ষক। নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুল মূলত একটি কোচিং সেন্টার। আগে থেকেই নিউ প্রতিশ্রুতি নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উত্তরপত্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছিল। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা কচাকাটা কলেজের ড্যমোনেস্টটর শহিদুল ইসলাম ও শিক্ষক মঞ্জুর আলমকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এছাড়াও আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের টয়লেট থেকে ভেজা উত্তরপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদেরকে সার্চ গেটের বাইরে করে বের করেন পুলিশ। এ সময় এক শিক্ষার্থীর নিকট একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ওই পরীক্ষার্থীর বাবাকে ডেকে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
নাগেশ্বরী থানার ওসি রূপ কুমার সরকার বলেন, ছড়িয়ে পড়া উত্তরপত্রটিতে দেখা গেছে মঞ্জুর নামে একটি ফোন থেকে তোলা। কথাও এসেছে নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ কারণে নিউ প্রতিশ্রুতি পরিচালক শহিদুল ইসলাম ও তার শিক্ষক মঞ্জুর ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। আপাতত দেখা গেছে ছবি তোলা ফোন এটি নয়। তারপর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ক্লিয়ার বোঝা যাবে।
এ বিষয়ে নিউ প্রতিশ্রুতি কোচিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও কচাকাটা কলেজের ড্যামোনেস্টটর শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদেরক স্যারেরা ডেকেছে। আমরা এসেছি। অনেক কিছু জানতে চেয়েছে বলেছি। কেন ডেকেছে জানিনা। একই কথা বলেছেন নিউ প্রতিশ্রুতির শিক্ষক মঞ্জুর আলম। তিনি বলেন, আমি কিছুই জানিনা। আমাকে ডেকে যা যা জিজ্ঞাসা করেছে সব বলেছি।
কেন্দ্রের পাশে থাকা একাধিক অভিভাবক এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে কথা বললে তাদের সন্তানদের পরীক্ষায় প্রভাব ফেলবে কেন্দ্রের লোকজন এমন কথা বলে তারা নাম প্রকাশ করতে রাজী হননি। তারা জানান, কেন্দ্রের ভিতরে কিছু পরীক্ষার্থীকে বেছে বেছে এসব উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। কিছু শিক্ষক এসে এসব দিয়ে যান। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। শুরু থেকে এভাবে চলছে। আব্দুল কাদের নামে একজন বলেন, আমার নাতনিকে নিয়ে যাই পরীক্ষা হলে। বাইরে দেখি মাস্টাররাও নকল নিয়ে দৌঁড়া দৌঁড়ি করছে। নাতনি প্রতিদিন বের হয়ে বলে ভেতরে অনেক স্যারে নকল নিয়ে যায়। একই কথা বলেন অভিভাবক জহির উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম। তারা জানান আদর্শ হাই স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রের এমন চিত্র প্রতিদিনের। এসব গ্যানজামের কারণে মেয়েরা ভীত হয়ে তাদের প্রশ্নোত্তর ভুলে যায় বলেও অভিযোগ করেন অভিভাবকরা।
তবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মোশারফ হোসেন এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন। তিনি বলেন, আজকেই প্রথম ‘স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় কেন্দ্রের ৭ নং কক্ষের পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা সাফি মোল্লা নামের এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার ফোনে পরীক্ষা সংক্রান্ত আপত্তিকর কোনোকিছু পাওয়া যায়নি। ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।’
নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই রকেট বলেন, পরীক্ষা শুরুর পর থেকে উত্তরপত্র ছড়াছড়ির বিষয়টি আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমি নিজেও পাই। কিন্তু কোথা থেকে হচ্ছে এটা বলা যাচ্ছেনা। এটা নাগেশ্বরীর বাইরে থেকেও হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি।
নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক আহমেদ বলেন, পরীক্ষা কক্ষে স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় এক শিক্ষককে চলমান পরীক্ষার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। ফোনে পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও তথ্য রয়েছে কিনা তা যাচাই করা হবে। আপত্তিকর কিছু পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও উত্তরপত্র ছড়ানোর সন্দেহে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদেরও একটি ফোন জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেএ/এসআই