রঙিন ফুলকপি চাষ করে প্রথম বারেই সেনা সদস্যের বাজিমাত 

  • গাজীপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৪, ০১:৪০ পিএম

ঢাকা: শখের বসে অনেক আশা উদ্দীপনা নিয়ে বাড়ির পাশে মাত্র ২ শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করে প্রথম বারেই বাজিমাত করেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বির্তুল গ্রামের কৃষক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো.আলী হোসেন (৭৫)। 

জানা গেছে, কৃষক আলী হোসেন প্রতি বছর সাদা ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রোকলি চাষ করলেও। এবারই প্রথম শখের বসে পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন। উদ্দেশ্য ছিলো যদি তার এই পরীক্ষামূলক ভাবে রঙিন ফুলকপি চাষাবাদ সফল হয়। 

তাহলে তিনি এ ধরনের জাতের কপি চাষ বাণিজ্যিকভাবে আরো বড় পরিসরে শুরু করবেন। আর যদি তার ফলন আশানুরূপ না হয়। তাহলে আর কখনো রঙিন ফুলকপি চাষ করবেন না। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সামান্য যে ২ শতক জমিতে চাষ করেছেন। 

তাতেই তার ব্যাপক ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে তার এমন অভাবনীয় সাফল্য দেখে স্থানীয় পর্যায়ের আরও অন্যান্য কৃষকরা এই রঙিন ফুলকপি চাষাবাদের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য উদ্যমী কৃষকের কাছে ছুটে আসছেন। 

গাজীপুরের এর আগে কোনো এলাকার কৃষক রঙিন ফুলকপি চাষাবাদ করেনি। এ জন্য স্থানীয় বাজারে আলী হোসেনের ফুলকপির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ একটু বেশি। অনেকেই শখের বসে এলাকার উৎপাদিত রঙিন কপি কিনতে এক ধরনের আনন্দ উৎসাহবোধ করছেন। 

শুরু তাই নয় ক্রেতাদের এমন আগ্রহ ও চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন এই কৃষক। বর্তমানে বাজারে ৬০ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রি করছেন তিনি। আবার খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা কেজিতে। 

বাজারে কপি কিনতে আসা ক্রেতারাও এর দাহিদা দেখে তারাও এ ধরনের জাতের কপি চাষাবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন এই অদম্য কৃষক আলী হোসেনে। 

তিনি বলেন, মনে শখের বাসা বাঁধলেও প্রথমে আমি লোকসানের ভয়ে রঙিন ফুলকপি চাষাবাদ করতে চায়নি। পরে একটা পর্যায়ে আমি কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে উৎসাহ দেন রঙিন ফুলকপি চাষাবাদের।

এর পর স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগীতা ও পরামর্শে উদ্যোগী হন। তিনি আরও বলেন, এবার প্রথম বারেরই যে ভাবে ফলন ভালো হয়েছে। রঙিন ফুলকপি চাষে খবর খুব একটা বেশি হয় না। তবে লাভবান সাদার চেয়ে বেশি। 

তিনি বলেন, আগামীতে যদি কৃষি অফিস থেকে আরও বেশি সহযোগিতা পাই। তাহলে বেশি করে চাষাবাদ করবো। রঙিন ফুলকপি চাষ করে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। 

এ দিকে রঙিন ফুলকপির ক্ষেত দেখতে এসেছেন দুর দুরান্ত থেকে অনেক যুবক। রাফি নামে এক যুবক বলেন। তিনি এসেছেন কালিয়াকৈর থেকে। তারও অনেক ইচ্ছে রঙিন ফুলকপি চাষাবাদ করার। এটাতে অনেক লাভবান হওয়া যায়। আলী হোসেন একজন বয়ষ্ক মানুষ হয়ে সফল ভাবে চাষাবাদ করে বাজিমাত করেছেন। আমরা আরও বেশি করবো ইনশাল্লাহ। 

পুষ্টিবিদদের মতে,বাজারে সাদা, হলুদ, বেগুনি ও সবুজ রঙয়ের ফুলকপি পাওয়া যায়। প্রচলিত সাদা ফুলকপির চেয়ে এসব রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে। হলুদ ফুলকপিতে ভিটামিন এ এর বিকল্প হিসেবে ক্যারোটিনয়েড থাকে। 

এমনকি কচুতে যে পরিমাণ ভিটামিন 'এ' থাকে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ থাকে হলুদ ফুলকপিতে। এছাড়াও রঙিন ফুলকপি খেলে চোখ এবং ত্বককে ভাল রাখে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে;যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন,সাদা ফুলকপির চেয়ে তেমন বেশি একটা খরচ রঙিন ফুলকপিতে হয়না। তবে লাভ দিগুন হওয়ার সম্ভবা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ফুলকপি মূলত শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। কালীগঞ্জ উপজেলায় এ বছর ১২৯ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। তবে এরমধ্যে বেশিরভাগই সাদা ফুলকপি।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, এবারই প্রথম বারেরমতো পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপি চাষাবাদ করেছেন কৃষক আলী হোসেন। প্রথমে তিনি লোকসানের ভয় পেয়ে ছিলেন। 

পরে কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেয়ে উৎসাহী হয়।এই কৃষকের সফলতা দেখে এখন উপজেলার অনেক কৃষকেরা রঙিন ফুলকপি চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। 

এআর