সাগরে মাছ নেই, খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৪, ০২:৩৮ পিএম
ছবি : প্রতিনিধি

কক্সবাজার: ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছ নেই। তাই, বঙ্গোপসাগর থেকে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা। অথচ, অন্যান্য বছর গুলোতে এই মৌসুমে সাগরে ছিল মাছের ভরপুর। মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বলছেন, সাগরে নুইন্যার (জেলিফিশ) অস্বাভাবিক আগমনে মাছ নেই সাগরে। অবশ্য, সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, নুইন্যা বা জেলিফিশ যেখানে থাকবে, সেখানে মাছের উপস্থিতি হ্রাস পাবে।

কক্সবাজারের একমাত্র মৎস্য অবতরণকেন্দ্র। এই মৎস্যকেন্দ্রে সাগর থেকে আহরিত মাছ বেচা-বিক্রি হয়। কিন্তু, এই মৎস্যকেন্দ্রে গত এক সপ্তাহ ধরে যেসব মাছ ধরার ট্রলার ভিড়ছে, সবকটি ট্রলার খালি। কিছু সংখ্যক ট্রলারে ছোট মাছের দেখা মিললেও ইলিশ, রূপচাদা থেকে শুরু করে আশানুরূপ কোন মাছ নেই। একারণে হতাশ জেলে ও তাদের পরিবার। সামনে ঈদ নিয়ে অনেকটা শংকিত এসব পরিবার গুলো।

জেলে নুরুল কবির জানান, ‘দুইদিন ধরে সাগরে বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলে মাছ পায়নি। ট্রলার নিয়ে যেদিকে যায়, সেদিকে নুইন্যা আর নুইন্যা (জেলিফিশ)। যেভানে নুইন্যা থাকবে, সেখানে মাছ থাকবে না। সাগরে জাল ফেললেই মাছের বদলে উঠে আসছে জেলিফিশ।’

লতিফ মোল্লা। বাড়ি নোয়াখালী। দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে সাগরে মাছ আহরণ করছেন। শুক্রবার (২২ মার্চ) ভোর সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারি ঘাটে ট্রলার ভিড়িয়েছেন। মাছ নেই সাগরে। তাই মাছ পায়নি। যতটুকু মাছ পেয়েছেন, তা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচও উঠে আসবে না। এখন দ্বিতীয়বার সাগরে যাওয়ার খরচ ট্রলার মালিত (বহদ্দার) দিবে কিনা সন্দেহ। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ঈদের খরচ নিয়ে শংকায় আছি’।

একই কথা বলছেন, জেলে সৈয়দুর রহমান। সাগরে নুইন্যার উপস্থিতি এমনভাবে বেড়েছে, অতীতের কোন সময়ে দেখা যায়নি। সাগরে নুইন্যা আসলে পালিয়ে যায় সব মাছ। কারণ, নুইন্যাকে ভয় পায় সাগরের যেকোন মাছ। এছাড়াও নুইন্যার ভয়ে জেলেরা সাগরে জাল ফেলতে ভয় পায়। কারণ, নুইন্যা গুলো জালে আটকে গেলে, এগুলো ফেলতে অনেক সময় অপচয় হয়।

শুধু ফিশারি ঘাটে ফেরা জেলেরা নয়, জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ জেলে পরিবার গুলোর দিন কাটছে হতাশায়। মাছের ভরা মৌসুমে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে এই হতাশা বাড়ছে দিন দিন। মাছের আশায় নিয়ম করে প্রতিনিয়ত সাগরে গিয়ে অনেকটা খালি হাতে ফিরছেন তারা। লাভের খাতায় খরচের হিসাব বেড়েছে দ্বিগুন। একারণে, বেশিরভাগ জেলের ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা, বোট নিয়ে সাগরে যাওয়া-আসার খরচও উঠছেনা তাদের।

শুক্রবার সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ভোর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যেসব মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে ফিরেছে সবকটি খালি। কিছু কিছু ট্রলার সামান্য মাছ নিয়ে আসলেও তা কাংখিত নয়। একারণে জেলের চোখে-মুখে যেন হতাশায় অন্ধকার। কারো মুখে হাসি নেই। ট্রলারে কেউ জাল মেরামত আবার কেউ বসে অলস সময় পার করছেন।

সাগরে নুইন্যা বা জেলিফিশ নিয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: তরিকুল ইসলাম বলছেন, ‘নুইন্যা বা জেলিফিশ এক ধরনের অমেরুদন্ড প্রাণী যাদের পৃথিবীর সব মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়। এটি সাগরে উপরি অংশ থেকে যতটুকু সম্ভব গভীরে যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের বেশী দেখা দিচ্ছে এই জেলিফিশ। কারণ, বৃষ্টিপাত কমে গেলে বা সাগরে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া সহ নানা কারণে জেলিফিশের বিচরণ বেশী হয়।’

মো: তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে জেলিফিশ বেড়ে গেছে। সাগরে একেক সময় এক এলাকায় জেলিফিশের উপস্থিতি বেশী দেখা যায়। একারণে, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউট জেলিফিশ নিয়ে কাজ করছে। সাগরে কয়েক প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। তাই, জেলিফিশকে কিভাবে খাওয়ার উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রেখেছি আমরা।

একদিকে মাছের ভরা মৌসুম, অন্যদিকে পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদ। এই বিশেষ দিনগুলোতে সাগরে মাছের এমন পরিস্থিতিতে জেলে ও ট্রলার মালিকরা কোনভাবে হিসাব মেলাতে পারছেন না। একারণে দিশেহারা এসব মানুষগুলো। তাই, আগামী দিন গুলোতে সাগরে বেশী মাছ পাওয়া যায়, সে প্রত্যাশায় কক্সবাজার উপকূলে মাছ শিকারে নিয়োজিত পরিবার গুলো। 

এসআই