ভোলা: মুজিব শত বর্ষের উপহারের ঘর বিতরণে অসহায়দের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে মেহেন্দীগঞ্জের চেয়ারম্যান সামসুল বারি (মনির) এর বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগের বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করেছেন মনির। তিনি বলেন, যারা ঘর পায়নি তারাই অভিযোগ করেছে।
৮ নং চর গোপালপুর ইউনিয়নের ৯ নং কাজির চর এসব ঘরে বর্তমানে বসবাসকারীরা সোনালী নিউজ কে জানান কাজীরচর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান মনির প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে পদে পদে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
জমির মাটি ভরাটের জন্য টাকা,টিউবওয়েলের জন্য টাকা,টয়লেটের জন্য টাকা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টাকা , সর্বশেষ দলিল তৈরির জন্য টাকা দিয়েও দলিল পাননি অনেকে। কেউ আবার কয়েক ধাপে টাকা পরিশোধ করে এক বছর আগেই ঘরে উঠেছেন।
চেয়ারম্যানের স্বজনদের নামে বরাদ্দ দেয়া ও তার একান্ত কর্মীদের নামে নেয়া ঘরে তারা কেউ না উঠলেও প্রকল্পে বসবাসের অযোগ্য বলে প্রকাশ করে অন্যত্রে থাকছেন।
[221990]
ঘরে না থাকারা বলছেন, এখানে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, খাবারের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, নেই শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা এক কথায় মানুষ বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদার একটি চাহিদা পূরণের ব্যাবস্থা নেই এই প্রকল্পে।
তাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের অধিকাংশ ঘরেই ঝুলছে তালা। কিছু ঘরে ঝুলতে দেখা যায় ডাবল তালাও এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের ঘরে বসবাস করা বাবুল মিয়া বলেন, এইসব ঘরের জন্য দুজনের থেকেই টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান মনির কিন্তু ঘরের দলিল পেয়েছে একজন। তাই দুজনেই দুটি তালা মেরে দিছে ঘরে কেউ বসবাস করছেন না।
নানা সমস্যার কারন দেখিয়ে কেউ থাকছেন না এসব ঘরে। তবে যারা এসব ঘরে থাকছেন তাদের ভাষ্য যাদের ঘরের প্রয়োজন নেই তাদের কে ঘর দেয়া হয়েছে বলেই ঘর গুলো শুন্য রয়েছে। আর যাদের ঘরের প্রয়োজন টাকা দিতে না পারার কারনে তারা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেউ আবার স্বজনপ্রীতির কারণে টাকা দিয়েও পায়নি এ প্রকল্পের ঘর।
প্রকল্পের ঘরে ভাসমান অবস্থায় বসবাসকারী বিধবা ফারজানা বলেন, ‘ঘরের জন্য আমি অনেকেরই দ্বারে দ্বারে ঘোরার পরে পরপর তিনটি ঘর পরিবর্তন করে এই ঘরে বসবাস করছি। এই ঘরেরও দলিল নাকি অন্য কারো নামে, দলিল মালিক এখানে এসেছিল আমি তাকে বলেছি আমার সাথে জামেলা না করার জন্য কেননা আমি টাকা দিয়ে ঘরে উঠেছি।’
[221998]
উপহারের বেশিরভাগ ঘরেই ঝুলছে তালা। মোটা অংকের টাকা না দিতে পারার কারণে ভূমিহীনরা এ ঘরগুলোতে থাকতে পারছে না।
টাকা দিলেই দলিল করে দিয়ে ঘর বুঝিয়ে দিবে এমন আশ্বাসে দুস্থ্য পরিবারের কাছ থেকে স্থানীয় মালেক খাঁ ঘর প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের অভিযোগ রয়েছে, তবে টাকা দিয়ে কেউ কেউ ঘরের দলিল পেলেও দলিল বঞ্চিতদের সংখ্যাও রয়েছে বেশ।
দলিল নিয়ে ঘরে আসতেই দেখে তার নিবন্ধিত নামের ঘরে বসবাস করছেন আরেকটি পরিবার জোরজবরদস্তির জেরে দুজনই তালা ঝুলিয়ে রাখছেন ঘরে, ফলে বসবাস করতে পারছেন না নিবন্ধিত পরিবার কিংবা দখলকৃত পরিবারের কেউ।
অভিযোগ রয়েছে মালেক খাঁ ও ইউপি সদস্য ইব্রাহিম ও শামিম মিলেই এই টাকা আদায় করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
কেউ বা খোদ চেয়ারম্যান সামছুল বারি মনির এর নিকট টাকা দিয়েও দলিল কিংবা কাঙ্ক্ষিত ঘর পায়নি।
তবে শেষ আক্ষেপ চেয়ারম্যান সামছুল বারি মনির তাদের দলিল সহ মুজিব বর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দিতে না পারলেও তাদের টাকাটা যেন ফিরিয়ে দেন।
এদিকে ঘরে না থাকা ঘর প্রাপ্তদের ভাষ্যমতে, রাস্তা বেহাল দশা, স্কুল-মাদ্রাসা নেই, বিরান চর এলাকা, চিকিৎসা ব্যাবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশিরভাগ ঘরেই তালা ঝুলিয়ে তারা থাকেন নিজ বাড়িতে।
[221985]
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মালেক খাঁ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খরচের জন্য টাকা চেয়ারম্যান মনির স্যারের আদেশে নিয়ে তা চেয়ারম্যান সাহেবকে দিয়েছি। কে ঘর পেয়েছে কে পায়নি তা আমার জানার বিষয় না।’
তবে চেয়ারম্যান সামছুল বারি মনির বলেন, ‘ঘর না পাওয়া পরিবারের অভিযোগ সত্য, আমরা যে নামগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দিয়েছি তা অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে হয়তো কেউ বাদ পরেছে, যারা বাদ পরেছে তারাই জোড়পূর্বক ঘরে বসবাস করছে এবং তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।’
টাকার বিনিময়ে স্বচ্ছল পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আনিসুল ইসলাম জানিয়েছেন এমন বিষয়ে সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রতারণার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএস