চুয়াডাঙ্গার বাজা‌রে অপরিপক্ক লিচুতে সয়লাব

  • চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার জেলা শহরসহ ৪ উপ‌জেলার বাজারগু‌লো‌তে দেখা মিলছে রসালো ফল লিচুর। প্রচণ্ড তাপে লিচু ঝরে যাওয়ার কারণে পরিপক্ক হওয়ার আগেই অপ‌রিপক্ক লিচু বাজারে তুলছেন চাষীরা। তবে লিচুর গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য আরও কয়েকদিন পর সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃ‌ষি বিভাগ থে‌কে।

‌জেলা কৃ‌ষি অ‌ফি‌সের তথ্য মতে চুয়াডাঙ্গার ৪ উপ‌জেলায় মোট ২৯৩ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উপ‌জেলা ওয়া‌রি দামুড়হুদা উপ‌জেলায় ৪৫ হেক্টর, সদর উপ‌জেলাঢ ৬২ হেক্টর, জীবননগর উপ‌জেলায় ১৩১ হেক্টর ও আলমডাঙ্গা উপ‌জেলায় ৬৫ হেক্টর। 

চল‌তি মৌসু‌মে চুয়াডাঙ্গা জেলার ২৯৩ হেক্টর লিচু বাগান থে‌কে ২৪০ মে:টন লিচু ফল‌নের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে।

নাম প্রকাশ না করার শ‌র্তে কৃ‌ষি অ‌ফি‌সে এক‌টি সূত্র জানায়, চল‌তি মৌসু‌মে সব বাগানে মুকুল আসেনি। তাছাড়া টানা প্রায় দেড় মাসের দাবদা‌হে অ‌ধিকাংশ গা‌ছের লিচু ঝ‌রে পড়ায় ফলন অর্ধেক নে‌মে এসেছে। ফ‌লে এবার লিচু উৎপাদ‌নের লক্ষমাত্রা অর্জিত হ‌বে না। এতে লোকসান গুনতে হবে চাষিদের।

কৃষকরা বলছেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণেই পরিপক্ক হবার আগেই গাছ থেকে লিচু পেড়ে ফেলতে হচ্ছে। কারণ গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ছে। গাছে লিচু ফেটে যাচ্ছে। তারপর কাঙ্খিত দাম না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

কিন্তু হতাশার বিষয়, লিচুচাষিরা লোকসান গুনলেও লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পরিপক্ক হবার আগেই লিচু বাজারে আসায় লিচুর স্বাদও কমছে বলে জানান ভোক্তারা। 

চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারে লিচু কিনতে আসা সদর উপ‌জেলার ভীমরুল্লা গ্রা‌মের ইকরামুল মোল্লা জানান, বাজারে নতুন ফল এসেছে। তাই ছেলে মেয়েদের জন্য কিনেছেন। যদিও একটু স্বাদ কম টক বে‌শি। আরো কিছুদিন গাছে থাকলে লিচু পুষ্ট হতো স্বাদও পাওয়া যেতো।

লিচু চাষি দামুড়হুদা জয়রামপুর গ্রা‌মের আব্দুল আ‌লিম জানান, তার বাগানে শতাধিক লিচু গাছ থাকলেও ফল এসেছে অর্ধেকের কম গাছে। আবার গত বছরের তুলনায় সেই গাছ গুলোতে লিচু দাঁড়িয়েছে কম। আর রোদ্রের তাপে গাছ থেকে লিচু একাই ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়াই পানি দিয়েও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো গাছে আছে, তা আবার আকারে ছোট। যার কারণে এবারে বাগানে যা লিচু পাওয়া যাবে তা আ‌গের বছ‌রের (গত বছর) তিন ভাগের এক ভাগ।

দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড বটতলায় লিছু কিন‌তে আসা মিরাজুল ইসলাম জানান, বাজারে প্রকারভেদে লিচুর দাম এবার একটু চড়া। প্রতি পোণ (৮০ টা লিচু) লিচুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। সে হি‌সে‌বে প্রতি পিস লিচুর দাম আসছে প্রায় ৪ (চার) টাকা। এ বছর লিচুর দাম একটু বেশি হলেও মৌসুমি ফল হিসেবে বেশি  দাম দি‌য়েই ছোট ছোট এ লিচু কিনলাম। 

‌তি‌নি আ‌রো ব‌লেন, লিচু আরও বেশি নেয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু লিটু টক ও তুলনামূলক আঠির আকার বড়, রয়েছে পোকার আক্রমণও তাই বেশি কেনা হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা বড় বাজা‌রে মাথাভাঙ্গা ব্রী‌জের মু‌খে লিচু বি‌ক্রি কর‌ছিল ৪/৫ জন। আমা‌দের এই প্রতিনিধি দে‌খে শা‌কিব হাসান (২৪) না‌মে একজন লিচু বি‌ক্রেতা বা‌দে। অন্যরা একে এ‌কে লিচুর ডোল রে‌খে স‌রে প‌ড়েন। 

লিচু বি‌ক্রেতা চুয়াডাঙ্গা শহরত‌লি দৌলত‌দিয়াড় গ্রা‌মের রাজ আলীর ছে‌লে শা‌কিব হাসান জানান, রোদ গর‌মের কার‌ণে এবার লিচুর ফলন অ‌নেক কম হ‌য়ে‌ছে। সে কার‌ণে এবার লিচুর সাইজ ছোট হ‌লেও দাম একটু বেশী। লিচুর প্রকার ভে‌দে ৩০০ টাকা থে‌কে ৩৫০ টাকায় (৮০ টা লিচু) বি‌ক্রি কর‌ছি। দাম বেশী ও আকা‌রে ছোট হওয়ায় বি‌ক্রি ভাল হ‌চ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউল হক জানান, হাইপোগ্লাইসিন এ সাধারণত কাঁচা বা আধা পাকা অর্থাৎ পাকা নয়, এমন লিচুতে পাওয়া যায়। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মারাত্মক বমি বমি ভাব সৃষ্টি করে। অন্যদিকে মিথাইলিন-সাইক্লো-প্রোপাইল-গ্নাইসিন উপাদানটি গ্রহণের ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। এর কারণে বমি, অচেতন এবং দুর্বল হয়ে পড়ে রোগী। কাঁচা বা আধা পাকা লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, লিচুর গুণগত মান ঠিক রাখতে আরও কয়েকদিন পরে লিচু বাজারজাত করলে ভাল হত। পরিপক্ক হওয়ার আগে লিচু খেলে এতে পুষ্টি ঠিকঠাক পাওয়া যাবে না। ফলে লিচুর আসল স্বাদও পাওয়া যাবে না। 

‌তি‌নি আরও ব‌লেন, আমার মত লিচু পাড়ার নি‌র্দিষ্ট কোন সময় নেই ব‌লে কৃষক ও ব্যবসা‌য়ি দু'জনাই ‌সে সু‌যোগ নি‌য়ে অপ‌রিপক্ক লিচু বি‌ক্রি কর‌ছে।

এমএস