ভবঘুরে কল্পনার ঠাঁই হলো সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে

  • গাজীপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
ছবি : প্রতিনিধি

গাজীপুর: আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছে। যারা নিজেরাই জানেনা তাদের নাম,পরিচয়, ঘর-বাড়ি ও বাসস্থানের ঠিকানা। আজ এই যায়গা তো কাল ঐ যায়গা এরকম করেই ভবঘুরে জীবন যাপন করেন তারা। এমনই এক ভবঘুরে নারী ৫৫ বছর বয়সি কল্পনা। তিনি গাজীপুর শহরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া বস্তার কাগজ,পলিথিনসহ বিভিন্ন আবর্জনা দিয়ে গড়ে তুলা একটি খুপরির ঘরে দীর্ঘ দিন যাবত বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি তার এই নিঃস্ব ও অসহায়ত্বের জীবন চলা দেখে সোনালী নিউজসহ জেলায় কর্মরত কয়েকটি গণমাধ্যমের কর্মীরা এ বিষয়টি অবহিত করেন জেলা সমাজসেবা অধিদফতরকে। পরে তাদের দেওয়া সেই তথ্য যাচাই বাছাই শেষে। জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে অব শেষে ভবঘুরে নারী কল্পনার স্থান মেলেছে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রের পাকা ভবনে। 

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে জেলা সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানাগেছে, মঙ্গলবার (২৮ মে) গাজীপুরের পূবাইলে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ভবঘুরে কল্পনাকে। ওই সূত্রে আরও জানা গেছে, মানুষ-মানুষের জন্য, জীবন শুধুই জীবনের জন্য। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় ভবঘুরে মানুষের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয় কিছু দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেই দিক বিবেচনা করেই জেলার সমাজ সেবা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসকের স্বদিচ্ছা ও মানবিকতায় কল্পনার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কল্পনা এখানে থাকা অবস্থায় পাবেন তার ভরণপোষণ, চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজনীয় কাপড়/পোশাক। এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্রে তার মত প্রায় সাড়ে ৩০০ আশ্রয়হীন ও ভবঘুরে মানুষ বসবাস করছেন বলে জানা যায়। 

এক তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশের বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতির ভিওিতে অসহায় ও মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মানুষকে দুই শ্রোণীতে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগ হচ্ছে, এমন কিছু মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ সমাজে পাওয়া যায়। তাদের বাসস্থান এবং অভিভাবক আছে। তারা সারা দিন বাইরে ঘোরাফেরা করে। রাতে বাসায় ফিরে আসেন। দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে, সমাজে এমন কিছু মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা মানসিক ভারসাম্যহীন তাদের কোন নিদিষ্ট বাসস্থান নেই এবং তাদের কোন আত্মীয়স্বজন নেই অথবা থাকলেও তারা বলতে পারেন না। সকল স্মৃতি শক্তি তাদের বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারা অত্যন্ত অসহায় এ ধরনের মানুষেরা পাগলের মতো করে যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায়। রাস্তায় খায়, পথেঘাটে, স্টেশনে যেখানে সুযোগ পায় সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। যেখানে সুযোগ পায়, সেখানেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়। অসুস্থ হলে রাস্তায় পড়ে থাকে, এদের দেখার কেউ নেই। এমনকি অনেকে রাস্তায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুবরণ করলে দাফন করা হয়। 

সুবিধাবঞ্চিত অসহায় এসব মানুষ বেশির ভাগই মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী হয়ে থাকেন গ্রামাঞ্চলে, শহরাঞ্চলে, হাটবাজার ও বিভিন্ন স্থানে এই শ্রেণির মানুষের দেখে মেলে। আধুনিক বিশ্বায়নের এই যুগে এসব মানুষের পুনর্বাসনের দায় সমাজ ও রাষ্ট্র এড়াতে পারেনা। কেননা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষদের পিছিয়ে রেখে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নয়ন সম্ভব না। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, রাজনীতি ব্যক্তিবর্গ ও সমাজের দ্বায়িত্বশীলরা তথ্য বিশ্লেষণ করে পেয়েছেন। দেশে ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার। রাজধানী ঢাকায় এদের সংখ্যা অধিক। গড়ে প্রতি জেলায় এদের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ২০০ জন। এ হিসাবে দেশে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮০০ জন। 

গাজীপুর সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল করিম জানান, সম্প্রতি রেমালের সময় বৃষ্টি বর্ষণেও কল্পনা নামে নারী ওই খুপরিতেই অবস্থান করছিলেন। তিনি ১ বছরেরও অধিক সময় ওখানেই এভাবে বসবাস করে আসছেন বলে জানা যায়। পরে এ বিষয়টি জানতে পেরে ওই নারী সম্পর্কে আরও খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ভবঘুরে ওই নারীর কথা গাজীপুরে কর্মরত দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী ও সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সহকারী কমিশনার ওয়াহিদা শাবাবকে ঘটনা স্থলে পাঠালে সেখানে তিনি ঘিয়ে বিভিন্ন তথ্য যাছাই-বাছাই ও ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করে কল্পনাকে ভবঘুরে হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে ওই সন্ধ্যায় গাজীপুর শহর সমাজসেবা অফিসার আবু বকর মজুমদারের তত্ত্বাবধানে গাড়িতে তুলে জেলার পূবাইলের সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় ভবঘুরে কল্পনাকে। বর্তমানে কল্পনা সেখানে ভালো ও সুস্থ রয়েছেন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যত দিন না কল্পনার পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কোন সন্ধান পাওয়া যাবে। ততদিন পর্যন্ত এ আশ্রমেই থাকবেন কল্পনা। এখানে থাকা অবস্থায় তার ভরণপোষণ, চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজনীয় পোশাক সরবরাহ করা হবে। 

এমএস/এসআই