ফরিদপুর: ফরিদপুরের কোতোয়ালি এলাকায় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ (চন্দ্রবোড়া) মারতে পারলেই ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতি সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।
তবে এ ধরনের ঘোষণা ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে দন্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। এরই মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে রাসেলস ভাইপারের ছোবলে শুক্রবার (২১ জুন) ফরিদপুর সদরে এক কৃষকের মৃত্যু ও রাজবাড়ীর পাংশায় আরেক কৃষকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফরিদপুর সদরে গত দুদিনে দুটি এবং সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গতকাল একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয়রা।
প্রস্তুতি সভায় দেওয়া বক্তব্যে শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘ফরিদপুরের কোতোয়ালি এলাকায় কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ মেরে আনতে পারে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। যে যতটি সাপ মারতে পারবে তাকে সেই পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ সাপ থেকে মানুষকে রক্ষা করতেই এ পুরস্কারের ঘোষণা।’
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ঝর্ণা হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
[225994]
যেকোনো বন্যপ্রাণী নিধন আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটি দেখা যাচ্ছে। এ সাপের বংশবৃদ্ধির হার বেশি। একবারে একটি মা সাপ ৬০ থেকে ৭০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রায় সবকটি বেঁচে যায়। এ সাপ সাধারণত চর এলাকায় থাকে এবং ব্যাঙ, ইঁদুর খেয়ে বাঁচে।’
রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু : ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেলের দুর্গম চরে রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী ডিক্রিরচরে গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল দুদিনে দুটি রাসেল ভাইপারস সাপ পিটিয়ে মেরেছে গ্রামবাসী।
স্থানীয়রা জানায়, নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৮ দাগ এলাকায় রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর গতকাল সকালে ওই কৃষকের মৃত্যু হয়। তার নাম হোসেন ব্যাপারী (৫০)। তিনি ওই এলাকার পরেশউল্লা ব্যাপারীর ছেলে।
২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য হেলালউদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হোসেন ব্যাপারীকে সাপে কামড়ায়। পরে তাকে ট্রলারযোগে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার আগেই গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে গতকাল সকালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ডাঙ্গি গ্রামে আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ক্ষেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান একই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)। তিনি বলেন, সকালে বাদামক্ষেতে কাজ করার সময় সাপটি নজরে পড়ে। এরপর লাঠি এনে তিন-চারটি বাড়ি মেরে সাপটি মেরে ফেলি। আগের দিন ওই গ্রামের হারুন শেখের ছেলে ইউসুফ আরেকটি রাসেলস ভাইপার পিটিয়ে মেরেছে বলে জানান তিনি।
ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকির বলেন, সম্প্রতি ওই এলাকায় রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পাংশায় আহত কৃষক হাসপাতালে : রাজবাড়ীর পাংশার হাবাসপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরে বাদাম তুলতে গিয়ে গতকাল সকাল ১০টার দিকে মধু বিশ্বাস (৫০) নামে এক কৃষক রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে আহত হয়েছেন। তাকে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মধু বিশ্বাস উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চর-আফড়া গ্রামের মৃত আক্কেল বিশ্বাসের ছেলে।
মধু বিশ্বাস বলেন, সকালে পদ্মা নদীর চরে ক্ষেত থেকে বাদাম তোলার সময় রাসেলস ভাইপার সাপে কামড় দেয়। আমার চিৎকারে পাশে থাকা কয়েকজন ছুটে এসে সাপটি মেরে ফেলেন। পরে স্থানীয়রা সাপসহ আমাকে পাংশা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
পাংশা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. এনামুল হক বলেন, রাসেলস ভাইপারের কামড়ে আহত এক কৃষককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি পর্যবেক্ষণে আছেন।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী জানান, রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে এক কৃষক অসুস্থ আছেন। আমরা তার সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছি।
কলারোয়ায় আবারও মিলল রাসেলস ভাইপার : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আবারও দেখা মিলল রাসেলস ভাইপার সাপ। উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী বাজারের পাশে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাপটি দেখা যায়। পরে সাপটি পিটিয়ে মেরে ফেলে স্থানীয়রা।
হিজলদী গ্রামটি ভারত সীমান্তঘেঁষা। ওই গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি মাঠে যান। ধানক্ষেতের পাশে সাপটি তিনি দেখতে পান। সে সময় তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হলেও আশপাশের লোকজনের সহায়তায় সাপের গতিবিধি লক্ষ্য করে কিছুদূর গিয়ে কৌশলে সাপটি মেরে ফেলতে সক্ষম হন। তিনি আরও বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে সাপটি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। কিছুদিন আগেও একই এলাকায় একজোড়া সাপ দেখা যায়। তবে মারা সম্ভব হয়নি।’
এদিকে কয়েক মাস আগে সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়ালী গ্রামের ধানক্ষেতে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারেন কৃষকরা। পরে একই এলাকায় আরও দুটি রাসেলস ভাইপার দেখা গেলে সেগুলোকে মেরে ফেলে এলাকাবাসী।
ওই দুই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধারণা করা হচ্ছে বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার সাপটি বিশেষ করে ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয়। কারণ এ দুই এলাকায় ছাড়াও আশপাশে যেখানে এ সাপের সন্ধান মিলেছে, তার বেশিরভাগ পাওয়া গেছে ধানক্ষেতে।
এসআই