ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে বাড়ছে পানি, নতুন করে শুরু ভাঙন 

  • টাঙ্গাইল প্রতিনিধি  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৪, ১০:০৪ পিএম

টাঙ্গাইল: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারী বর্ষণের ফলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। বিরাজ করছে বন্যা। চরাঞ্চলসহ যমুনার পার্শবর্তী এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। বিগত বছর ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল বেঁচে ছিল, সেটিও ভাঙনের আশঙ্কায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।

শুক্রবার (০৫ জুলাই) উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে দেখা যায় ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া ও নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কয়েক দিন ধরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা শুক্রবার (৫ জুলাই) পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ এবং টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন ও নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুল হক মাসুদ। তারা দুই একদিনের মধ্যেই জিওব্যাগ ফেলার আশ্বাস দেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের।

গত বছর বন্যায় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা গাইড বাঁধের জিওব্যাগ আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে ধসে যাচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধ পাকা সড়ক, গাইড বাঁধ বসত বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, ছোট বড় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

নদীপাড়ের মানুষের অভিযোগ, গেল বছর ভাঙনরোধে বিভিন্ন স্থানে নামমাত্র জিওব্যাগ ফেলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেগুলো এখন ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিজ বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলে। দরিদ্র মানুষের বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলা হয় না।

গত বছর ভাঙনের শিকার একাধিক ব্যক্তিরা বলেন- শুকনো মৌসুমে বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে নদীতে জেগে ওঠা চর কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় না। যার কারণে নদীতে পানি আসলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়।

যমুনা তীরবর্তী ভাঙন কবলিত পাটিতাপাড়া বাহাদুর টুকনা এলাকার আবু সুফিয়ান ও জালাল প্রামাণিক বলেন, যমুনা নদীটি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই মাইল দূরে ছিল। গত কয়েক বছর ধরে যমুনার ভাঙনে আমাদের ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের থাকার জায়গা টুকুও ভেঙে যাচ্ছে।

এবিষয়ে নিকরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুল হক মাসুদ জানান, গত দুই দিন ধরে মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা এলাকায় নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। তারা এসে পরিদর্শন করেছেন। অতি দ্রুত জিওব্যাগ ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে যমুনায় পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার্ত মানুষগুলো মাথা গোঁজার একটু জায়গার আশায় হন্যে হয়ে খুঁজছে উঁচু জায়গা। তারা বিশুদ্ধ পানি এবং নিজেদের খাদ্য সংকটে পড়েছে উপরন্ত গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে কিছু কিছু জায়গায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ভাঙন কবলিত এলাকার একটি স্থানে ভাঙন প্রতিরোধে জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। 

অন্যান্য ভাঙন কবলিত স্থানেও ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত জিওব্যাগ ডাম্পিং-সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই তাদের জন্য বরাদ্দ পাবো বলে আশা করছি।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এসব এলাকায় জিওব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ভাঙনে ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এদিকে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার্ত মানুষের বিশুদ্ধ পানিসহ নিজেদের খাদ্য সংকটে পড়েছে উপরন্ত গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

এআর