২৮ দিনের শিশুর বিরল অস্ত্রপচারে প্রশংসায় ভাসছে তাজউদ্দীন মেডিকেল 

  • গাজীপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

গাজীপুর: শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু সার্জরি বিভাগে প্রথমবারের মতো শিশুর ফিটাস ইন ফিটু অস্ত্রপচারে অর্থাৎ শিশুর ভেতর জন্ম নেওয়া শিশুর বিরল অপসারণ করে জেলার সর্বস্তরের নাগরিকদের মুখে-মুখে প্রশংসায় ভাসছে এ অপারেশনের দ্বায়িত্বে থাকা শিশু সার্জরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.শংকর চন্দ্র দাসসহ তার সহযোগী ডাক্তাররা।

এতে করে প্রতিষ্ঠানের পুরোনো বদনাম, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেছনে ফেলে আবারও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুনাম ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে জানিয়েছেন জেলার সুশীল নাগরিকরা।

অপরদিকে বিরল এ ক্রিটিকাল অপারেশন নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে সফল ভাবে সম্পূর্ণ করতে পারায় খুশি হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পরিচালনা পরিষদের কর্তৃপক্ষ। 

জানা যায়, শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু সার্জরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.শংকর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে বিরল এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। বর্তমানে সার্জারির পর শিশুটি শঙ্কা মুক্ত ও সুস্থ আছে। শিশুর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা সকলের কাছে শিশুর সুস্থতা কামনায় দোয়া চেয়েছেন। 

এদিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, দেশে অনেক ধরনের অপারেশনের কথা শুনা গেলেও শিশুর এ ধরনের বিরল অস্ত্রোপচারের কথা খুব কমই শুনা যায়।কেননা এ ধরনের রোগীর সংখ্যা খুবই কম পাওয়া যায়। 

চিকিৎসকরা আরও জানান, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে, অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিক্ত হবার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোষ বিভাজনের কোনো এক পর্যায়ে যদি কোষগুলি সমান দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়, তবে জমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলি অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষযুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ শিশু জন্ম হয়। 

চিকিৎসকরা আরও বলেন, অপরদিকে কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অপর একটি শিশুও বড় হতে শুরু করে। তবে পরবর্তীতে এই বাচ্চাটির সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং বেচেঁ থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে।এই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু। 

গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি এলাকার বাসিন্দা এমরান হোসেনের প্রথম ছেলে সন্তান ২৮ দিন বয়সের এ শিশুটির নাম আবদুল্লাহ। শিশু আবদুল্লাহর বাবা এমরান হোসেন জানান, যখন গর্ভে সন্তান আসে তখন তার স্ত্রীকে একটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার করান। সেই সময়ে এ ধরনের কোনো রোগের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পরে যখন সিজিারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার স্ত্রী সন্তান জন্ম দেয়। তখন ওই সময়ে শিশুটির পায়ু পথ সংলগ্ন একটি মাংস পিণ্ডের মতো দেখতে পাওয়া যায়। এর পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দাসের স্মরণাপন্ন হলে তার ছেলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন বলে তিনি জানান। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিরল রোগের যিনি অপারেশনের নেতৃত্ব দেন ডা.শংকর চন্দ্র দাস জানান, ফিটাস ইন ফিটু একটি জন্মগত সমস্যা যা সচরাচর ঘটে না। প্রতি পাঁচ লক্ষ শিশুর মধ্যে একটি পাওয়া যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে এ রকম ঘটনা ঘটেছে প্রায় দুইশ’রও কম। বাস্তবে এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি শিশুর ভিতর আরেকটি শিশুর অবস্থান।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের বিরল রোগের অপারেশন বাংলাদেশে খুব কমই হয়ে থাকে। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবারই প্রথম এবং প্রথম বারেই সফলভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে ফিটাস ইন ফিটু অপারেশন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এটা সৃষ্টিরকর্তার দয়ায় হয়েছে। একই সঙ্গে সকল দ্বায়িত্বশীলদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ছিলো। 

এআর