কুমিল্লা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সবুজ ভূইয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তাকে নিয়ে গর্বিত তার শিক্ষক বাবা বিল্লাল হোসেন।
আসিফ মাহমুদ সবুজ ভূইয়ার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরাবাজার থানাধীন আকুবপুর গ্রামে। তার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার মা রোকসানা আক্তার একজন গৃহিণী। আসিফ মাহমুদ তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বড় একজন ও ছোট দুজন বোন রয়েছে।
[229259]
শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাতে আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন আসিফ মাহমুদ। প্রথমদিকে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারে যে সে আন্দোলনের সমন্বয়ক। তখন আসিফ মাহমুদকে বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করেন বাবা-মা ও বোনেরা। পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে আসিফ বলেন, আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসব না। হয় গুলি খেয়ে মরব, না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরব। এরপর থেকেই আসিফ মাহমুদের পরিবারে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা শুরু হয়।
বিল্লাল হোসেন বলেন, পাঁচ দিন নিখোঁজের সময় মা-বাবা বোনসহ পরিবারের সবার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। বন্ধ থাকে সবার খাওয়া-দাওয়া। আমরা লাশ ঘরে গিয়েও তাকে খুঁজেছি। আন্দোলন সফল হওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। আমরা চাই এমন খুনি, ফ্যাসিবাদী সরকার আর কখনো না আসুক।
[229256]
তিনি আরও বলেন, আসিফের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রতিদিন আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু ১৯ জুলাই তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজ করেও পাইনি। ২৩ জুলাই ইত্তেফাক পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়, আসিফ মাহমুদকে গুম করা হয়েছে। তারপর আমরা শাহবাগ থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করতে গেলে ওসি আমাদের জিডি নেননি। সেখান থেকে যাত্রাবাড়ী থানায় যাই, সেখানেও একইভাবে আমাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে খোঁজ করি, কিন্তু আসিফের কোনো সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালের লাশঘরে (মর্গ) গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। তারপর প্রেস ক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসিফের গুমের বিষয়টি দেশবাসীকে জানাই।
বিল্লাল হোসেন বলেন, ২৪ জুলাই হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিলে সেখান থেকে ২৬ জুলাই পুলিশ পরিচয়ে আবারও তাকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই ডিবি কার্যালয় থেকে ফোন করে জানায়, আপনার ছেলে ডিবি কার্যালয়ে আছে, দেখে যান। আমি আর আসিফের মা সেখানে গিয়ে দেখা করলে তাদের ছেড়ে দেবে বললেও পরে ছাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, আসিফ ছোটবেলা থেকেই একরোখা ছিল। যেখানে অন্যায় দেখত, সেখানেই প্রতিবাদ করত। ছেলেটার একরোখা স্বভাব তাকে আজ সরকারের উপদেষ্টা বানিয়েছে। একজন বাবা হিসেবে আমি অনেক গর্বিত। আমি আমার শিক্ষকতা জীবনকে সার্থক মনে করছি ছেলের এমন সাফল্যে।
বিল্লাল হোসেন এই আন্দোলনে নিহত সবার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়াসহ সব সমন্বয়ক এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানান।
অজোপাড়াগাঁয়ের ছেলে আসিফ মাহমুদের এমন সাফল্যে এলাকাবাসীও আনন্দিত ও গর্বিত।
আইএ