লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর)। নির্ধারিত সময়ে জেলার ৩৪টি অস্ত্রের মধ্যে ৩৩টিই জমা পড়েছে। কিন্তু শেষদিন রাত ১২টা পর্যন্ত বাকি ১টি অস্ত্র জমা পড়েনি। অস্ত্রটি সাবেক জেলা যুবলীগ সভাপতি ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান একেএম সালাহ্ উদ্দিন টিপুর।
টিপু আলোচিত লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা প্রয়াত আবু তায়েরের ছেলে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা ১টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। এখন ওই অস্ত্রটি অবৈধ হয়ে গেছে। এ কারণে অস্ত্রের লাইসেন্সকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে মাঠে নেমেছে যৌথবাহিনী। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারির আগে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে মন্ত্রণালয় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
[231618]
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সুত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে জেলা প্রশাসন ব্যক্তিমালিকানা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করে ৩৫টি। এসব লাইসেন্সের বিপরীতে ৩৪টি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। আলাউদ্দিন দিদার নামে এক ব্যক্তি লাইসেন্স নিলেও তিনি অস্ত্র ক্রয় করেননি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ২৭ জনের নামে লাইসেন্সকৃত ৩৩টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। জমা পড়া অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ১৫টি, শটগান ১৬টি, বন্দুক ১টি ও রাইফেল ১টি। জমা পড়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ১টি ও রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আ ক ম রুহুল আমিনের ২টি অস্ত্র রয়েছে।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর সাবেক যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ্ উদ্দিন টিপু অনবরত গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। পৃথক ২টি হত্যা মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও টিপু তার অস্ত্র জমা দেননি।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে হামলা-সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওইদিন প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে যুবলীগ নেতা টিপুসহ তার লোকজন ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। ওইদিন ৪ শিক্ষার্থী গুলিতে নিহত হয়। এছাড়া আরও ৮ জন পিটুনি ও সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যায়। গুলিবিদ্ধ ও হামলায় শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয়। ছাত্র-জনতার ওপর টিপুর গুলিবর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ১৪ আগস্ট রাতে গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আল আসাদ আফনান পাটওয়ারীর মা নাছিমা আক্তার ও নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া ৪ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ও কাজে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের দায়েরকৃত ওই মামলাতেও টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। ছাত্র-জনতার দেওয়ার আগুনে টিপুর দুটি বাসভবন পুড়ে যায়। ওইদিনই টিপু পালিয়ে যায়। তিনি কোথায় আছেন তা কেউই বলতে পারছেন না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের পদধারীরাও আত্মগোপনে রয়েছে।
জেইউবি/এসআই