আন্দোলনে নিহত মিলনের ছেলে বায়জিদ

‘বাবা তো কোন অপরাধ করেনি, তাহলে ওরা কেন মেরে ফেললো?’

  • তুষার আচার্য্য, রংপুর | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪, ১১:৩০ পিএম
ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত মুসলিম উদ্দিন মিলন।

রংপুর: পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন রংপুর নগরীর পূর্ব গণেশপুরের বাসিন্দা স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলন। সামান্য আয়ে দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সাজানো সংসার ছিল তার। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের সময় বুলেটের আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে মিলনের সুখের সংসার। তার মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে গেছে পুরো পরিবার। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী দিলরুবা আক্তারের দিন যাচ্ছে চোখের জল মুছতে মুছতে। দুই ছেলের ভবিষ্যৎ এর চিন্তায় ও স্বামীর শোকে পাগলপ্রায় অবস্থায় আছেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন দূর্ভাগা মিলন। এরপর আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। প্রথমে রংপুর মেডিকেল, আর পরে তার স্থান হয় অন্ধকার কবরে।

বাবাকে কাছে না পেয়ে প্রায় দুই মাসেও কান্না থামছেনা মিলনের ৭ বছর বয়সী ছোট ছেলে তানজিদের। শত শত মানুষের ভিড়ে বাবাকে খুঁজে বেড়ায় সে।

[232007]

নিহতের পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল মিলনের মরদেহ। এর ৩৮ দিন পরে স্ত্রী দিলরুবা আক্তার স্বামী হত্যার বিচারের আশায় মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি আসামি করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সিসহ ১৭ জনকে। তারই তদন্তের স্বার্থে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) মিলনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয় ময়নাতদন্তের জন্য।

এসময় মিলনের বড় ছেলে বায়েজিদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সোনালীনিউজকে তিনি বলেন, ‘বাবা তো কোন অপরাধ করেনি, কোন দোষ করেনি। তিনি আন্দোলনেও জাননি। তাহলে ওরা বাবাকে কেন মেরে ফেললো? সেদিন দুপুরে বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারে গেয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে আন্দোলনের মধ্যে পড়ে যান তিনি। এটাই কি ছিল বাবার অপরাধ? বাবা মারা গেলো বিকেলে, কিন্তু আমরা জানতে পারলাম সন্ধ্যায়। বাবা মারা যাওয়ার সময় আমাদের কাছে পেলোনা। বাবার কি অপরাধ ছিলো?’

কথা বলার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বায়েজিদ। বাবা যে তার খুব প্রিয় ও কাছের ছিলো, তাই তো চাপা কষ্ট বুকে জমিয়ে ঘুরছে সে।নিজে ১৪ বছরের কিশোর হলেও বড় ছেলে হিসেবে ছোটভাই ও মা কে সামলানোর গুরুদায়িত্ব নিয়েছে কাঁধে।

[232044]

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘ছোট ভাই বাবাকে বারবার খুঁজছে। রাতে খেতে চাচ্ছে না, বলছে বাবা আসলে একসাথে খাবো।’

প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে বায়েজিদ বলেন, ‘বাবার চলে যাওয়ার পর বড় আব্বু এখন দেখাশোনা ও খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমার ছোটভাই তামজিদের খাবার এখন হয়তো কোনভাবে হচ্ছে, কিন্তু কিছুদিন পর কি হবে? আমার লেখাপড়ার খরচ, আমাদের সংসার খরচ এসব কিভাবে জোগাড় হবে এটা জানিনা। মা এসব চিন্তায় কেমন যেন হয়ে গেছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুর কোতোয়ালি থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রাসেল ইসলাম বলেন, ‘মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। নিহত মিলনের পরিবার যেন সঠিক বিচার পায় সেই উদ্দেশ্যেই আমরা কাজ করছি।’

এসএস