নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা শহর

চাপা আতঙ্ক আর ভয় ঘিরে আছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের

  • চট্টগ্রাম প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ১০:২৮ এএম

চট্টগ্রাম : ‘পাহাড়ি-বাঙালি’ সংঘর্ষ ও চারজন নিহতের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা বাড়ানোর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সফরে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে আগের উত্তেজনা প্রকাশ্যে কিছুটা কমেছে; তবে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক আর ভয় ঘিরে আছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের।

সহিংসতা ও সংহাতের পরদিন শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি দুই জেলা শহরে পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও তুলনামূলক শান্ত সময় পার করেছে।

হত্যার প্রতিবাদে ডাকা অবরোধে কোথাও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও মানুষজনের চলাচল ছিল তুলনামূলক কম। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল পাহাড়ের এ দুটি শহর।

খাগড়াছড়ির ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হলেও রাঙামাটিতে ‘পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক ও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা অবধি’ তা বলবৎ রাখার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এরমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব ও উসকানির বরাতে ভয় আর আতঙ্ক বেশি ছড়াচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাগরিকদের গুজব ও উসকানি সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আগের দুই দিনের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এ দুই পার্বত্য জেলা সফর করছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। রাঙামাটিতে সভা শেষে তারা খাগড়াছড়িতে যান।

উভয় জেলাতেই ডিসির সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিশেষ সভায় তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। দায়ীদের কোনোরকম ছাড় নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সরকার সচেষ্টা বলে আশ্বস্ত করেছেন সবাইকে।

এছাড়া হামলায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও আহতদের উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা।

আরেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পৃথকভাবে দীঘিনালায় গেছেন। তিনিও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে অনেকে সুবিধা নিতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা তাদের সুযোগ করে দেব না। আমরা বলব, পাহাড়-সমতল সব মিলেই বাংলাদেশ।

[232534]

হঠাৎ করে এই দুই পার্বত্য জেলায় সংঘাত দেখা দেয় বুধবার সকালে চুরির অভিযোগে ‘গণপিটুনিতে’ মামুন নামে এক যুবক হত্যার ঘটনাকে ঘিরে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এ বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে লারমা স্কয়ারের দোকানপাটে আগুন দেয় একটি পক্ষ। তাতে শতাধিক দোকান পুড়ে যায়। দীঘিনালার ওই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে আহতদের খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে পুরো জেলায় আতঙ্ক তৈরি হয়।

খাগড়াছড়ির সংঘাতের জেরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে আরেক পার্বত্য শহর রাঙামাটিতেও। সেখানে সংঘর্ষে একজন মারা যান। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা শহর : আগের দিনের ঘটনার পর রাঙামাটি শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। সচরাচর দেখা না গেলেও শুক্রবার থেকে র‌্যাবকে বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি গাড়িতে তারা টহল দিচ্ছেন।

সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের টহল। ধর্মঘটের কারণে সড়কে যানবাহন না থাকায় মানুষের চলাচলও বেশ কম।

জরুরি কাজে যারা বের হচ্ছেন তাদেরও বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই আইডি কার্ড দেখাতে হচ্ছে। পুরোপুরি নিরাপত্তার চাদরেই ঢাকা পুরো শহর। নতুন করে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ মেলেনি।

রাঙামাটি যেন গুজবের শহর : শুক্রবারের সহিংসতার ঘটনার পর দৃশ্যত শান্ত রাঙামাটি শহর। তবে শহরজুড়ে গুজবের শেষ নেই। আতঙ্কিত পাহাড়ি এলাকার মানুষ। অনেকেই নানা ধরনের উড়ো খবর পেয়ে ফেইসবুকে তা শেয়ার করছেন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক। ছড়িয়ে পড়ছে ভয়।

শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আলাপকালে আতঙ্কের কথা বললেও কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি নন।

এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যে উসকানি ও গুজবে কান না দিতে পাহাড়ের বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিদর্শনে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারাও।

এ ধরনের গুজব থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলছেন, কোনো প্রকার তথ্য শুনেই তা যাচাই-বাছাই ছাড়া, নিশ্চিত না হয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ না করার অনুরোধ করছি। যেকোনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেব।

বহাল থাকবে ১৪৪ ধারা : জেলা শহরে শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে কার্যকর হওয়া ১৪৪ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক।

[232531]

তিনি বলছেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক ও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা অবধি ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরাও মাঠে আছেন। যেখান থেকেই কোনো খবর আসছে সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন তারা।

কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন আর না ঘটে তার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন জেলা প্রশাসক।

তবে খাগড়াছড়ির জেলা শহরের ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পরিবহন ধর্মঘট চলবে রাঙামাটিতে : রাঙামাটিতে চলমান পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়ে রাঙামাটি অটোরিকশা চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু।

তিনি বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গাড়ি ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলবে।

শ্রমিকদের গাড়ি বের না করার নির্দেশনা দিয়ে বাবু বলেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্যও কেউ ডাকেনি। তাই ধর্মঘট অব্যাহত রাখা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই আমাদের।

শুক্রবার রাঙামাটি শহরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের’ মিছিল থেকে গাড়ি ভাঙচুর, চালকদের মারধরের অভিযোগে অনির্দিষ্টকালের এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল রাঙামাটি বাস ট্রাক মিনিট্রাক সিএনজি মাইক্রো মালিক চালক ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন।

হাটের দিন, কিন্তু লারমা স্কয়ারে ভিন্ন চিত্র : খাগড়াছড়ির দীঘিনালার একটি ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত্র। সেখানকার বোয়ালখালী নতুন বাজারে শনিবার সাপ্তাহিক হাট বসে। নতুন বাজারের লাগোয়া হওয়ায় লারমা স্কয়ার পর্যন্ত সেই হাট বিস্তৃত হয়। স্বাভাবিক সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতায় ঠাসা থাকলেও আজ দেখা গেল অন্যচিত্র।

লারমা স্কয়ারে কোনো বিক্রেতা আসেনি; তাই কোনো ক্রেতাও নেই। এ যেন অন্য লারমা স্কয়ার! সুনসান নিবরতা।

সকালে গিয়ে দেখা যায়, লারমা স্কয়ারের পোড়া দোকান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। আগুনে পোড়া গ্যাস সিলিন্ডার, পোড়া সবজি, চাল পড়ে আছে।

আগুনে পুড়ে গেছে জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) দীঘিনালা উপজেলা কার্যালয়। সেখানে সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাখা জনসংহতি সমিতির নয়টি মোটর সাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়েছে।

লারমা স্কয়ারকে কেন্দ্র করে যাতে নতুন করে কোনো সহিংসতা না হয় সেজন্য বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। আতঙ্কের কারণে হাটের দিনে কোনো পাহাড়ি ক্রেতা-বিক্রেতা আসেননি। বাঙালি ক্রেতাদের উপস্থিতি থাকলেও তা অন্যদিনের তুলনায় বেশ কম।

অবরোধের কারণে পণ্যবাহী যানচলাচল ছিল না। প্রতি সপ্তাহে হাটের দিনে চট্টগ্রাম থেকে মাছসহ বিভিন্ন পণ্য এলেও শনিবার তা আসেনি। যানচলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি থমথমে পরিস্থিতির কারণে জমেনি হাট।

বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বৃহস্পতিবারের হামলার-অগ্নিসংযোগের ঘটনার বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদের ছিলাম। খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে চলে আসি। আসার পর দেখছি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। এখানে পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে ব্যবসা করছে। কোনো বৈরী মনোভাব ছিল না।

[232515]

আমার মনে হচ্ছে, বহিরাগতরা এসে এই পরিবেশটা নষ্ট করেছে। এই ঘটনার কারণে পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়িদের প্রায় ৭৮টি দোকান ও বাঙালিদের ২৪টি আগুনে পুড়ে গেছে।

জেএসএস দুষছে ইউপিডিএফকে : সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে জেএসএস খুবই উদ্বিগ্ন বলে তুলে ধরেন সংগঠনটির রাঙামাটি জেলার সভাপতি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা।

তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই। এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ই শান্তিপ্রিয়। কিন্তু পাহাড়ের পরিস্থিতিকে অশান্ত করার জন্য এখানে মনে হয়, কেউ ওত পেতে আছে। সেই মহলটি তিন পার্বত্য জেলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে বলে আমরা মনে করি। তাই সবার উচিত পরিস্থিতি শান্ত রাখা।

শুক্রবারের ঘটনার জন্য ‘ইউপিডিএফ’ দায়ী বলে দাবি করে বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি প্রকাশ্যে বলতে চাচ্ছি যে, যারা সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নাম নিয়ে, অর্থাৎ ইউপিডিএফের দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ইন্ধনদাতাদের দিয়ে, এখানকার সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে, ওরা তো বুঝে না আসলে কী, ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে ওরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

এজন্য আমরা পার্টির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। উনাদের বোঝা উচিত যে, পার্বত্য অঞ্চল সকলের। এখানে আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতে চাই।

তবে জেএসএসের এ ধরনের অভিযোগকে অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফ। সংঘটনটির দাবি, জেএসএস ‘নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ট্যাগ দিচ্ছে’, এবং সেটা দুঃখজনক।

জেএসএস নেতা গঙ্গা মানিক চাকমার বক্তব্যকে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিচারিতার রাজনীতি’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউপিডিএফ মুখপাত্র ও সংগঠক অংগ্য মারমা।

তিনি বলেন, তারা (জেএসএস) একদিকে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন চায়; আবার চুক্তি বাস্তবায়ন না করা পতিত স্বৈরাচারী সরকারের তাবেদারিও করেছে।

অংগ্য মারমা বলেন, সারাদেশের আন্দোলনের চেতনা ও প্রভাব পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের উপরও পড়েছে স্বাভাবিকভাবে। তাই তারা ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ গড়ে তুলে আমাদের সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য শ্লোগান তুলেছে। তাদের এই স্পিরিটকে আমরা সাধুবাদ জানাই, সমর্থন জানাই। কিন্তু জেএসএস বরাবরের মতই নতুন প্রজন্মের আবেগ-অনুভূতি বুঝতে অক্ষম।

তাদের ভুল রাজনীতি, ক্রমশ তাদের মুসলিম লীগের মতো পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা হয়ত এখনো তারা বুঝতে পারছেন না।

প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপপ্রয়াস: ইউপিডিএফ

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘাতের সূচনা ও বিস্তারিত তুলে ধরে শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং প্রত্যাখ্যান করেছে ইউপিডিএফ।

সংগঠনটি এ ধরনের বিজ্ঞপ্তিকে পাহাড়ের ‘প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপপ্রয়াস’ বলে অভিযোগ করেছে।

আইএসপিআরের বক্তব্যে বলা হয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় উদ্ভূত পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ দাঙ্গায়’ রূপ নিতে পারে আশঙ্কা করে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে সেনাবাহিনী।

আইএসপিআর এর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার ইউপিডিএফ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

সংগঠনটির মুখপাত্র অংগ্য মারমা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে একে ‘ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারি প্রেস নোট-এর প্রতিধ্বনি’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আইএসপিআর এর অভিযোগকে ‘বানোয়াট, সর্বৈব মিথ্যা ও প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপপ্রয়াস’ বলে দাবি করা হয়।

চলতি বছরের ১৮ জুন খাগড়াছড়িতে বাস চালকের সহকারী (হেলপার) মো. নাঈমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ইউপিডিএফের প্রতিবাদের কথা স্মরণ কারিয়ে দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিনের ধূমায়িত’ ক্ষোভের কারণে “দীঘিনালায় হামলা, খুন, অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে স্বাভাবিকভাবে সর্বস্তরের বিক্ষুব্ধ জনতা রাজপথে নেমে আসে এবং খাগড়াছড়ি পানছড়ি সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। তাতে কোনো দল বা ব্যক্তি বিশেষের হাত বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না।”

সাজেকে আটকা ১৪০০ পর্যটক : অবরোধের কারণে মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালিতে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন হাজার দেড় পর্যটক।

খাগড়াছড়িতে দুপক্ষের সহিংসতার ঘটনায় শনিবার সকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা। এই অবরোধে সমর্থন জানায় পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ।

তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধের পাশাপাশি রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। ফলে আটকাপড়াদের সাজেক ত্যাগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত বলেন, গতকাল (শুক্রবার) সকাল এবং দুপুরের স্কট মিলিয়ে ১১০-১১৫টি জিপ, ৫০টির মত মাহেন্দ্রা ও অটোরিকশা সাজেকে প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও অনেকে এসেছেন।

হঠাৎ অবরোধের ঘোষণা আসাতে পর্যটকরা আর খাগড়াছড়ির উদ্দেশে ফিরে যেতে পারেননি। আজ শনিবার পর্যটকরা সাজেকেই কাটিয়েছেন। আগামীকাল স্কট ছাড়বে কি না নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সহসভাপতি চাই থোয়াই চৌধুরী জয় বলেন, সাজেকে বর্তমানে প্রায় ১৪০০ এর মত পর্যটক অবস্থান করছেন। যেহেতু পর্যটকরা ফিরে যেতে পারেননি, তাই আমাদের রিসোর্ট কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পর্যটকদের থাকার খরচটি আজকের জন্য ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যদি আগামীকালও পর্যটকরা ফিরতে না পারেন তাহলে তাদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ ভাড়াই রাখা হবে।

৩ জনের দাহক্রিয়া সম্পন্ন : বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের সময় নিহত খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ধনরঞ্জন চাকমার (৫০) দাহক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে উপজেলার উদালবাগান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

তাকে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ সদস্য ও পরিবারের স্বজনরা শ্রদ্ধা জানান। তারা ধনরঞ্জন চাকমার হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

এতে এলাকাবাসীও যোগ দেন। শোকসভায় দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা, বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমা বক্তব্য দেন।

ধনরঞ্জন চাকমা লারমা স্কয়ারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। তার বাড়ি দীঘিনালার কামুক্কোছড়া তুলপাড়া গ্রামে।

অপরদিকে খাগড়াছড়ি সদর নারাঙহিয়া ও স্বনির্ভর এলাকায় জুনান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সকাল ১১টায় নিজ গ্রাম পল্টনজয় পাড়ায় রুবেল ত্রিপুরার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আর দুপুর ২টায় জামতুলি যুবরাজ পাড়ায় জুনান চাকমার দাহক্রিয়া হয়।

এমটিআই