সরকার পরিবর্তন হয়, তিস্তাপাড়ের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না

  • তুষার আচার্য্য, রংপুর ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৪, ১০:৪৫ এএম

রংপুর : ভারত থেকে আসা পানি ও ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যার দেখা দিয়েছে।

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করে ইতোমধ্যেই নেমে গিয়েছে তিস্তার পানি। কিন্তু দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়ে গেছে তিস্তাপাড় বাসীদের।

আগ্রাসী তিস্তার ভাঙ্গন,বন্যায় বাস্তুহারা মানুষের আর্তনাদ নিরসনের একমাত্র উপায় হিসাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী জানিয়েছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে আবু সাঈদ চত্ত্বরে এই দাবী নিয়ে মানববন্ধন করে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহন করা বেরোবি শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে একই দাবীতে দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

আবু সাঈদ চত্ত্বরে মানববন্ধন করা বেরোবি শিক্ষার্থী মাহিন তাশদীদ বলেন, আমরা এর আগ থেকে দেখছি প্রতিবছর সরকার পরিবর্তিত হয় কিন্তু তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না।এর আগের সরকারের ভারতনীতির কারণে পানি চুক্তি আমরা করতে পারি নাই।পরবর্তীতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে নানান টালবাহানা হয়েছে,কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি।

বেরোবি শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, দেশে লক্ষ কোটি টাকার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলেও মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।এই তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হলে তিস্তা কমিশন গঠন করে দ্রুত উত্তরের মানুষদের রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।এইজন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।তিনি রংপুরে এসেছিলো,তখনও আমরা এই কথা বলেছি তাকে।আমরা আর আশ্বাস চাইনা,আমরা তিস্তা মহা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই।

[233308]

বেরোবি শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জয় বলেন, তিস্তা মহা পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে উত্তরাঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।উত্তরাঞ্চলবাসীদের প্রধান দুঃখ তিস্তা,তাই দ্রুত এই দুঃখ মোচন করার জন্য আমরা আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

উত্তরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী জেলাগুলোতে নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রতিবছর কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়।বছরে তিন থেকে চারবার বন্যায় তারা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এর ফলে দারিদ্রতার চরম কষাঘাতে পড়তে হয় তাদের।

সরেজমিনে লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো গিয়ে দেখা যায়,বন্যার পানি নামার সাথে সাথে নতুন দুশ্চিন্তা ভর করে তিস্তা বাসীদের মনে।আকস্মিক বন্যার কারণে পূর্বাভাস না পাওয়ায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় তিস্তাপাড়বাসীরা।

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা জানায়, একটু বৃষ্টি হলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই।টানা দুদিন বৃষ্টি হলেই নদীর পানিতে আমাদেরকে ভাসতে হয়।এরপর পাড় ভেঙ্গে আমাদের বসতবাড়ি আসলেই জমি সহ সবকিছু কি গর্ভে চলে যায়।ভাঙতে ভাঙতে ২ কিলোমিটার নদী ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে।এখন আমাদের দাবি যদি না মেনে নেয় সরকার,তিস্তা মহাপরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন না করে,তাহলে হয়তো এখন যে এলাকাগুলো দেখতে পাচ্ছেন এ সবগুলো নদীগর্ভে চলে যাবে

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, প্রতিবছর বন্যায এবং নদী ভাঙ্গনের ফলে এক লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয় উত্তরাঞ্চলের।সেই সাথে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

আমরা দীর্ঘদিন থেকে তিস্তার এই সমস্যা নিয়ে কথা বলছি,আন্দোলন করছি।তিস্তা মহা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ছাড়া এই অঞ্চলের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্যের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তা।কোন দেশের অর্থায়ন না পেলে নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

আমরা দাবি জানিয়েছি তিস্তা বন্ড চালু করে তার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে। আজকে আমাদের এই দাবির সাথে সারা বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলো একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে এই মহা পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করার জন্য।যাতে করে এই অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘমেয়াদী কষ্টের সমাধান হয়।

এমটিআই