রাজশাহীর আধুনিক সড়কবাতি এখন গলার কাঁটা

  • রাজশাহী ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম

রাজশাহী: দেশজুড়ে রাজশাহীর সুনাম বয়ে আনা আধুনিক সড়কবাতি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আধুনিক সড়কবাতিগুলোতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় তা দিয়ে একটি নগরীর অন্যান্যখাতে বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে রাজশাহীর সড়কবাতি লাগানো হয়। যা সহজেই মানুষের নজর কেড়েছে। পরিচিতি বয়ে এনেছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে। কিন্তু বাস্তবতা আলাদা। 

যেখানে মানুষের কর্মসংস্থান বেশি জরুরি তা বাদ দিয়ে আধুনিক সড়কবাতির আলো রাজশাহীর মানুষকে বেশি স্বস্তি দেয়নি বলে জানান নগরবাসী। এছাড়া আধুনিক সড়কবাতিতে বিদ্যুৎ অপচয় যেন ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ৪২ কোটি টাকা। তবে রাসিকের নতুন প্রশাসক বিল পরিশোধের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।

রাজশাহী নগরীর কল্পনা সিনেমা হল মোড় থেকে তালাইমারি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের ডিভাইডারে ২০২২ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) ১৩০টি আধুনিক সড়কবাতির পোল স্থাপন করে। প্রতিটি পোলে সড়কবাতি রয়েছে ১৩টি করে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। হিসাব কষে দেখা যায়, প্রতি ১৫ মিটার পরপরই একেকটি বাতির পোল। রাতের ঝলমলে আলোক বাতির সৌন্দর্য্যে মন ভরে যায়।

রাজমুকুটের আদলে তৈরি বাতি রয়েছে নগরীর আরও প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে। এর বাইরে নগরীর প্রতিটি প্রধান সড়কেই ব্যয়বহুল সড়কবাতি রয়েছে। ১৭টি মোড় ও চত্বরে রয়েছে ১৮টি সুউচ্চ হাই মাস্ট পোল ও ফ্লাডলাইট। স্বল্প দূরত্বে এসব সড়কবাতির পোল স্থাপন বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়েছে সিটি করপোরেশনের। 

যে আধুনিক সড়কবাতির আলোর বাহার রাতের নগরীকে আলোচনায় এনেছিল এবং দেশজুড়ে রাজশাহীর সুনাম বয়ে এনেছিলো সেই সড়ক বাতিগুলোই যেন ক্রমশ বোঝা হয়ে উঠছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জন্য। 

প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহারে বেড়েছে বিদ্যুৎ খরচ। এরইমধ্যে সংস্থাটির কাছে বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। তার ওপর প্রতি সপ্তাহেই একেকটি পোলে তিন থেকে পাঁচটি করে বাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রেখে কম সংখ্যক বাতি জ্বালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এবং রাসিকের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, নেসকোর কাছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এগুলো পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বাতি জ্বালানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সৌন্দর্যও অক্ষুন্ন রাখা হবে।

তিনি আরও জানান, প্রকৌশল বিভাগের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কীভাবে কম বাতি জ্বালিয়ে খরচ কমানো যায়। এছাড়া এর বিকল্প পরিকল্পনাও চাওয়া হয়েছে।

তবে নগরবাসীদের অভিযোগ, সৌন্দর্যবর্ধক রাজমুকুট বাতিগুলো স্থাপনের পর থেকেই ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যাবার ঘটনা ঘটে চলেছে। বর্তমানে প্রতিটি পোলে গড়ে ৩ থেকে ৫টি করে বাতি জ্বলে না। প্রায় প্রতিনিয়তই লাইট নষ্ট হচ্ছে। আবার লাগানো হচ্ছে কয়দিন পরেই সেটি পুনরায় নষ্ট হচ্ছে। 

এসব প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সচেতন নগরবাসী মহব্বত আলী। বাতি স্থাপনের ফাইলগুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির।

তিনি বলেন, যেসব ঠিকাদার এসব কাজ করেছে তাদের ফাইল আমাদের কাছে আছে। তাদের পারফরম্যান্স গ্যারান্টি আমাদের কাছে আছে। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় রাজশাহী নগরীতে এসব সৌন্দর্যবর্ধক আধুনিক সড়কবাতি বসানো হয়। ২০১৯ সালে সড়ক বাতি স্থাপনে দুর্নীতির অভিযোগ প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে। তৎকালীন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিংকে সরবরাহকৃত বাতির বিপরীতে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধের এই অভিযোগ এখনও দুদকের তদন্তে রয়েছে বলে জানা গেছে।

আইএ