ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও দমেনি মাদক সম্রাট রুবেল গাজী। খোলস পাল্টে এখন আরও বেপরোয়া। নরসিংদীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ইটাখোলাতে মাদক কারবার থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এই রুবেল। তার বিরুদ্ধে তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।
একটি হত্যা মামলার আসামিও তিনি। অথচ তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। কয়েকবার আটক হলেও বের হয়েছেন দ্রুত। হয়েছেন আরও বেপরোয়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির স্থানীয় কিছু নেতাদের ছত্রছায়ায় ইটখোলায় গাজা এবং ফেন্সিডিল ব্যবসার সম্রাট হয়ে উঠেন। জড়িয়ে পড়েন চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ অন্যান্য অপকর্মেও।
কিন্তু তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে ভয় পেতেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ করলেও নানাভাবে হুমকি দামকিতে থাকতেন। এমনকি কৌশলে সমস্যায় ফেলে নির্যাতনও করতেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সম্প্রতি ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে কিছুদিন চুপ ছিল রুবেল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্য আবার সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি।
এবার আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড পাল্টে বিএনপি হয়ে উঠেন। এরমধ্যই স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতার হাত ধরে ওয়ার্ড বিএনপির সহযোগী সংগঠনের একটি পদ বাগিয়ে নিয়ে আবারও মাদক কারবারিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, রুবেল গাজী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জহিরুল হক ভুইয়া মোহনের ছোট ভাই জুনুর শেল্টারে ইটাখোলায় সিন্ডিকেট তৈরি করে মাদক চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করতেন। কিন্তু ক্ষমতা পালাবদলে বিএনপির ছত্র ছায়ায় চলে আসে। বর্তমানে ইউনিয়ন শ্রমিক দল ও যুবদলের দুইজন নেতার ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছেন।
[236841]
এ ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছু বিএনপির স্থানীয় নেতা বিশেষ সুবিধা নিতে তাকে ছায়া দেয়। আগে সে সুবিধা আওয়ামী লীগ নেতারা পেত। একজন নেতা বলেন, রুবেলের দীর্ঘদিনের অপকর্মে বদলাম এখন বিএনপির ওপর পরতে শুরু করেছে। এ কারণে রুবেলকে ছায়া দেয়া নেতাদের নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
এলাকাবাসীরা বলছেন, মাদক, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমুক্ত ইটাখোলা গড়তে রুবেল গাজীকে দমানোর বিকল্প নেই। স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, 'এখানে (ইটখোলা) রুবেল গাজীর অপরাধজগত ওপেন সিক্রেট। আগে (আওয়ামীলীগ আমলে) কেউ তার (রুবেল গাজী) বিষয়ে কিছু বলতেই পারতো না। বললে নানা জামেলা পুহাতে হতো। এখন একটু বলতে পারছি কিন্তু কতদিন বলা যাবে তার ঠিক নাই।'
আবু তৈয়ব নামের আরেকজন স্থানীয় জানান, গাজা এবং ফেন্সিডিল ব্যবসার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তাকেই ফাঁসিয়ে দিত। 'কেউ কিছু বললে প্রথমে কৌশলে কোনো এক বাসায় ডেকে নিয়ে সেখানে আগে থেকেই কোনো এক মেয়েকে দিয়ে তার সাথে একই রুমে বন্দি করে অসামাজিক কাজের নাটক সাজিয়ে চলতো অমানবিক নির্যাতন।
এরপর মোটা অংকের চাদা আদায় করে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মুক্তি দিতো। এ কারণে কথা বলতে সাহস পান না এলাকাবাসী, বলেন তৈয়ব।
এমন কথা আরও অনেকেই জানিয়েছেন। তারা রুবেলের আতঙ্কে অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে থাকতে হয়। নয়তোবা তুলে নিয়ে নির্মম ভাবে মারধরের শিকার হতে হয়।
আলতাফ হোসেন নামের একজন জানান, 'তার (রুবেল) নামে স্থানীয় থানায় এবং নিন্ম আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে।এবং ইতিমধ্যে কয়েক দফায় জেল খেটেছে। আর প্রতিবারই জেল থেকে বের হয়ে আরো বড় পরিসরে তার এই অপকর্মে লিপ্ত হয়। এ কারণেই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান অনেকে।'
এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানা সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এআর