রংপুর: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। আপনারা আঞ্চলিকভাবে চিন্তা করবেন না। এটা যদি করেন, তাহলে আপনারা নিজেদের ছোট করে ফেলবেন। আমরা দেশ নিয়ে ভাবছি। অঞ্চল ভিত্তিক ভাবনাগুলো আমাদের সংকুচিত করে দেয়, সংকীর্ণ করে দেয়।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
এদিকে উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার এরকম মন্তব্যের পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন করা ছাত্র জনতারা।
উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে ও উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করা জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুরের সমন্বয়কারী আলমগীর নয়ন বলেন,‘আমাদের সঙ্গে যে বৈষম্য হচ্ছে সেটা পুরো উত্তরাঞ্চলবাসী জানে। রংপুর বিভাগ, রাজশাহী বিভাগের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আন্দোলন হচ্ছে না। আমরা যে সরাসরি বৈষম্যের শিকার উপদেষ্টারা হয়তো এটি স্বীকার করতে লজ্জা বোধ করছেন। আমাদের কাছে এমন একটি তথ্য আছে যে আমাদের উত্তর অঞ্চল থেকে উপদেষ্টার তালিকা করা হচ্ছে এবং আমরা এমনও তথ্য পেয়েছি যে আমরা উপদেষ্টা পেতে যাচ্ছি। আজকে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে দুজন উপদেষ্টা এসেছেন আমি জানিনা তারা কোন জায়গা থেকে এ কথাটি বললেন। আমাদের উত্তরাঞ্চল থেকে যদি উপদেষ্টা দেয়া না হয় তাহলে আমরা যে কর্মসূচি পালন করেছি তার চেয়ে বড়সড়ো কর্মসূচি পালন করব।’
উপদেষ্টার এরকম বক্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের সমন্বয়ক নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, ‘সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার এরকম বক্তব্য গঠনমূলক নয়। আমরা এতদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের বৈষম্য নিরসনে যে আন্দোলন করছি সেটা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। একটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এরকমটি বলা শোভনীয় নয় এবং সরকারের একটি দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এরকম বক্তব্য কখনোই আশা করা যায় না। আমরা অবশ্যই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা জানতে পেরেছিলাম উত্তরবঙ্গ থেকে উপদেষ্টা নেয়া হচ্ছে। তারপরে আজ তার এই বক্তব্যটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে আবারো আমরা কর্মসূচি দেব।’
এর আগে শিল্পকলা একাডেমি হলরুমে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে রংপুর বিভাগের ৬৬ জন শহীদ পরিবারের মধ্যে ৪৪ জনকে আর্থিক সহযোগিতার চেক হস্তান্তর করা হয়।
সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে ও উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে গেল কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে রংপুরের ছাত্র-জনতা। টানা কর্মসূচিতে দু-দিন রংপুরের প্রবেশদ্বার মর্ডান মোড়ের ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। বিক্ষোভ থেকে বক্তারা বলেন, উত্তরাঞ্চলের উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া না হলে সারাদেশের সাথে উত্তরাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। এরপরে উপদেষ্টা নিয়োগের আশ্বাস পেলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে তারা।
এসএস