নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রাইভেট কারের চাপায় পুলিশের চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের জন্য রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) পুলিশের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে এ আবেদন করা হয়। তবে ছুটির দিনে এ বিষয়ে শুনানি হয়নি৷
নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, শুনানির জন্য আগামী রোববার তারিখ ধার্য করেছে আদালত। নিহতের বাবার করা মামলায় আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিন আসামি হলেন- মুবিন আল মামুন (২০), তার বন্ধু মো. মিরাজুল করিম (২২) ও আসিফ চৌধুরী৷
তাদের মধ্যে মুবিন আল মামুন ঘটনার সময় প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে৷ গাড়িটির রেজিস্ট্রেশনও সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তার নামে।
নিহত মুহতাসিম মাসুদ (২২) বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী৷ তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মাসুদ মিয়ার ছেলে৷ তার দুই সহপাঠীও ওই ঘটনায় আহত হন।
[240124]
আহত মেহেদী হাসান খান (২২) কুমিল্লা সদরের মফিজুর রহমান খানের ছেলে এবং অমিত সাহা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার তপন কুমার সাহার ছেলে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন মুহতাসিম৷ দুই বন্ধুসহ রাতে রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৩০০ ফুট সড়কে বেড়াতে যান। সেখানে নীলা মার্কেটে তারা রাতের খাবার খান৷ পরে বাসায় ফেরার সময় রাত ৩টার দিকে নীলা মার্কেটের অদূরে একটি পুলিশ চেকপোস্টে তাদের থামানো হয়৷
সে সময় বেপরোয়া গতির একটি গাড়ি পুলিশি চেকপোস্ট অতিক্রম করে বুয়েট ছাত্রদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়৷ ঘটনাস্থলেই মারা যান মুহতাসিম মাসুদ৷
ঘটনার পরপরই ওই গাড়ি থেকে মুবিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাইভেট কার তল্লাশি করে এক ক্যান বিয়ার ও একটি খালি মদের বোতল পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
মুহতাসিমের বাবা মাসুদ মিয়া শুক্রবার সকালে রূপগঞ্জ থানায় তিনজনকে আসামি করে সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তাদের ডোপ টেস্টও করা হয়।
শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত চত্বরে কথা হয় গ্রেপ্তার মুবিন আল মামুনের বাবা সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। তিনি একটি গাড়িতে বসা ছিলেন।
আল মামুনের দাবি, তার ছেলে মুবিনের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল৷ এর বাইরে অন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
আদালত চত্বরে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু রায়হান বলেন, আমার মক্কেলের গাড়িটি কাঞ্চনের দিকে সঠিক লেনে ছিল৷ গতরাতে খুব কুয়াশা ছিল এবং সড়কের ওপর সেখানে সংকেতবিহীনি একটি চেকপোস্ট ছিল৷ সাধারণত চেকপোস্টটি সেখানে থাকে না৷
তারপরও যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন ব্রেক কষার জন্য৷ কিন্তু হঠাৎই ব্রেকের সমস্যা হওয়ায় গাড়িটি চেকপোস্টের ব্যারিকেডে ধাক্কা দেয়৷ এবং ব্যারিকেডটি পরে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে, যা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং অনভিপ্রেত৷
চেকপোস্টটি রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ছিল বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি লিয়াকত আলী৷ তিনি বলেন, “পূর্বাচল এলাকায় ঘন ঘন অপরাধ হচ্ছিল৷ এ কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে ৩০০ ফুট সড়কের ওই জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন করে পুলিশ।
চেকপোস্টের বিষয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে সংকতও ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
মুবিনের গাড়ির লাইসেন্স ছিল বলে তার বাবা দাবি করলেও ওসি লিয়াকত আলী বলেন, দুর্ঘটনার পর প্রাইভেট কারের চালকের আসনে থাকা মুবিন আল মামুন কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি৷
এমটিআই