রাজশাহী: আওয়ামী সরকারের পতনের দিনই তান্ডব শুরু হয় রাজশাহীর নগর ভবনে। ১০ তলাবিশিষ্ট এই ভবনের প্রতিটি বিভাগেই ভাঙচুর, লুটপাটের অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন দপ্তরে একটি কম্পিউটারও ছিল না কাজ করার মতো। সিটি করপোরেশনের হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। ভঙ্গুর সিটি করপোরেশন এখনও ঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
নানাভাবে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে নগর সংস্থা। এরমধ্যে সম্প্রতি দুই কর্মকর্তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৮ টাকা ব্যয় করে। সিংহভাগ অর্থ ব্যয় হয়েছে উপহারসামগ্রী কিনতে। এরমধ্যে বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের হাতে ৮৪ হাজার ৬৭৩ টাকার এবং বিদায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিনকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা দামের উপহার দেওয়া হয়েছে।
[240504]
আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) আত্মগোপনে থাকা মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে অপসারণ করা হয়। প্রশাসক নিযুক্ত হন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। গত ১৯ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রশাসক হিসেবে ৩ মাস ১৩ দিন বা ১০৪ দিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সম্প্রতি তার বদলির আদেশ হয়। এরপর গত ১ ডিসেম্বর তাকে রাসিকের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একই অনুষ্ঠানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিনকেও বিদায় জানানো হয়।
নথিপত্রে দেখা গেছে, বিদায় অনুষ্ঠানে উপহার দিতে হুমায়ূন কবীরের জন্য রেমন্ড শপের রাজশাহী শাখা থেকে ৪৬ হাজার ৬৭৩ টাকায় একটি করে স্যুট, শার্ট ও টাই কেনা হয়। রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশান থেকে বিদায়ী প্রশাসকের সহধর্মিনীর জন্য ৩৮ হাজার ৫০০ টাকায় কেনা হয় একটি সিল্কের শাড়ি। এছাড়া বিদায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিনের জন্য কেনা হয় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা দামের শাড়ি। বিদায় সংবর্ধনার জন্য ফুলের তোড়া, নাস্তাসহ অন্যান্য খরচ হয় ১৯ হাজার ৯৬৫ টাকা। এই টাকা তোলা হয় সাবিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিলের বিপরীতে। এছাড়া প্রজাপতি ডিজিটাল এড ফার্ম থেকে বিদায় সংবর্ধনার ব্যানার বানানো হয় দেড় হাজার টাকায়। মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২০ হাজার ৬৩৮ টাকা। সম্প্রতি এসব বিল পরিশোধ করে নগর সংস্থা।
সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার ওই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নিশ্চিত করেন, বিদায়ী প্রশাসকের জন্য শার্ট, স্যুট ও টাই কেনা হয়। আর তার সহধর্মিণীকে ৩৮ হাজার টাকা দামের শাড়ি উপহার দেওয়া হয়। এছাড়া বিদায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা দামের শাড়ি দেওয়া হয়।
[240496]
এদিকে টাকার অভাবে ৫ আগস্ট পুড়িয়ে দেওয়া মেয়রের দপ্তর এখনও সংষ্কার করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ফলে সেখানে বসতে পারেন না নতুন প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। ব্যয়ের বোঝা কমাতে সিটি করপোরেশন সম্প্রতি দৈনিক মজুরিভিত্তিক প্রায় ২০০ কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছে। কাটছাঁট করা হচ্ছে নানা প্রকল্পে। বিদ্যুতের বিল কমাতে রাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে অর্ধেক সড়কবাতিও। ঠিক এমন সময় দুই কর্মকর্তার বিদায় অনুষ্ঠানে এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানামহলে।
সরকারি কর্মকর্তাকে বিদায়ে এত টাকা খরচের প্রশ্ন তুলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, যেখানেই জনগণের টাকা, সেখানেই অন্যায়ভাবে ভোগের চেষ্টা থাকে। এটা তার ক্ষুদ্র সংস্করণ। ‘প্রশাসকের স্ত্রী তো সিটি করপোরেশনের কেউ নন, তাকে কেন ৩৮ হাজার টাকা দামের শাড়ি উপহার দিতে হবে?’ প্রশ্ন তোলেন আহমেদ সফিউদ্দিন।
সরকারি টাকায় দামি উপহার দেওয়ার যৌক্তিকতা জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমি উপহারসামগ্রীর বিল দেখিনি। না দেখে আমি এ ব্যাপারে এখন কোন মন্তব্য করতে পারব না।’
এসএস