এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতির বাসায় র‍্যাব-দুদকের অভিযান

  • জেলা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ০৮:৪৪ এএম

চট্টগ্রাম: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলমের চট্টগ্রামের বাসায় অভিযান চালিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিকের ১৭৫/১৭৬ নম্বর জামিলাস কটেজ নামে বাসাটিতে অভিযান শুরু করে বিপুল সংখ্যক র‍্যাবের কর্মকর্তারা। রাত ৩টার দিকে শেষ হয় এই অভিযান। 

[240770]

বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের পার্শ্ববর্তী এ বাসাটিতে অভিযানকালে দুদকের একাধিক টিমকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। যদিও ঘটনাস্থলে স্থানীয় থানা পুলিশের কাউকে দেখা যায়নি। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এ অভিযানের বিষয়টি জানানো হয়নি।

গোয়েন্দা তথ্য ছিল, চট্টগ্রামের অন্যতম শিল্পপতি মাহবুবুলের বাসাটিতে বিপুল সংখ্যক বৈদেশিক এবং দেশীয় মুদ্রা মজুদ ছিল। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বানচাল করতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের তত্ত্বাবধানে এগুলো মজুদ করা হয়েছিল। যদিও প্রায় ৩ ঘণ্টা অভিযান শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাসাটিতে ওইরকম কিছুই পাওয়া যায়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রামের বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এ ব্যবসায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিপুল টাকা খরচ করেন। সবশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ও শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুল টাকাগুলো মজুত করেছিলেন। আন্দোলন বানচালে তারা বিপুল সংখ্যক টাকা খরচও করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একটি সূত্রের তথ্যমতে, অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা মজুদ ছিল বাসাটিতে। কয়েকদিন ধরে দুদক, পুলিশ ও র‍্যাব অভিযানের বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অভিযানের আগে কয়েকদিন ধরে একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা বাসাটি নজরদারিতে রেখেছিলেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে পালিয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ী মাহবুবুল। অভিযানের পর রাত ৪টার দিকে তাকে মুঠোফোনে কল করা হয়। অপরপ্রান্তে কলটি রিসিভ করেন একজন নারী। তিনি নিজেকে মাহবুবুলের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে তারা বাসাটিতে থাকেন না। বর্তমানে তাদের মেয়ে এবং মেয়ের স্বামীসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় বাসাটিতে রয়েছেন। বাসায় তেমন কিছু নেই। দুদক ও র‍্যাব টাকা মজুদের তথ্য পেয়ে আসছিল। কিন্তু কিছু পাওয়া না যাওয়ায় অভিযান শেষে তারা হাসিমুখে ফিরে গেছেন।

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ডিউটি অফিসার পলাশ কুমার হাজারী বলেন, “অভিযানের বিষয়ে আমরা অবহিত নই। এ বিষয়ে কোনো সংস্থা থেকে স্যারদের জানানো হলে আমি জানব না। তবে আমাদের কোনো টিম অভিযানে যায়নি।”

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, “অভিযানের বিষয়ে আমাদেরকে জানানো হয়নি। তবে আমাদের জানাতে হবে বিষয়টি দরকারিও নয়। দুদক এবং র‍্যাব সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নিজেদের মতো করে অভিযান পরিচালনা করতে পারে। তবে সোমবার রাতে দুদক ও র‍্যাবের অভিযান শুরুর পর বিষয়টি আমরা শুনেছি।”

গত ৯ সেপ্টেম্বর মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআই সভাপতি থেকে পদত্যাগ করেন। ওইসময় সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাহবুবুল ই-মেইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের ডিটিও বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। 

এর আগে, গত বছরের ১৪ আগস্ট ২০২৩-২৫ মেয়াদে এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মাহবুবুল আলম ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৮৩ সালে। গত প্রায় চার দশকে কমোডিটি ট্রেডিং থেকে শুরু করে ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন তিনি।

এম