পঞ্চগড়ে শুন্যপদে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে অনশন

  • পঞ্চগড় প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
পঞ্চগড়ে শুন্যপদে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে অনশন

পঞ্চগড়: দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের আধুনিক সদর হাসপাতালসহ ৫ উপজেলায় হাসপাতালে নেই চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক। ১৬৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ৪৫ জন চিকিৎসক রয়েছেন। 

এতে করে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগের শিকার হওয়ায় সংকট দূরীকরণের দাবিতে ৯ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারুণ্য সংগঠন সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে জেলা প্রশাসক মো.সাবেত আলী ও সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান খবর পেয়ে দুপুরে দেড়টায় অনশনকারীদের সাথে কথা বলে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে পানি পান
করিয়ে অনশন ভাঙান।

সকাল থেকে চলা অনশন কর্মসূচির দাবি বৈষম্য দূর করে শূন্য পদগুলোতে চিকিৎসক পদায়ন করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। একই সাথে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের নতুন নির্মাণ হয়ে পড়ে থাকা ২৫০ শয্যা ভবনটি চালু করা।

কর্মসূচিতে জেলার সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সমন্বয়ক এড আহসান হাবিব সরকার, ফোরামের উপ সমন্বয়ক ওয়াশিম আকরাম, সদস্য মানিক খান, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠক মো. রনি মিয়াজী বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যে তারা বলেন, চিকিৎসক সংকট থাকায় এবং ভালো চিকিৎসা সেবা না থাকায় জরুরি রোগি নিয়ে গেলেই তাদের রেফার করা হয়। রাত দুপুরে রোগি নিয়ে ছুটতে হয় রংপুর দিনাজপুর কিংবা ঢাকায়।

পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগির। তাই স্বাস্থখাতে এই বৈষম্য দূর করে ৯ দফা দাবিও জানান তারা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বৈষম্য দূর করে শুন্য পদগুলোতে চিকিৎসক পদায়নের দাবি জানান তারা। 

[243246]

অন্যথায় কঠোর অনশন কর্মসূচি পালন করার হুঁশিয়াড়ি দেয়া হয় অনশন কর্মসূচিতে। দাবিগুলো হলো: (১) পঞ্চগড় জেলার সকল সরকারি হাসপাতাল, কমিউনিটি হাসপাতালে ডাক্তারেরর শুন্য পদসমুহ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূরন করার ব্যবস্থা গ্রহণ সহ ডাক্তার পদায়ন নিশ্চিত করা। (২) পঞ্চগড় জেলা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহের স্থানীয় ডাক্তারদের মধ্যে যারা বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরে কর্মরত আছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, বদলিপূর্বক পঞ্চগড় জেলায় পদায়ন করা। (৩) বিভাগীয় শহর, উন্নত জেলা শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী সরকারি হাসপাতাল সমুহে যেখানে ১ পদের বিপরীতে একাধিক ডাক্তার আছেন তাদের মধ্য থেকে বদলিপূর্বক পঞ্চগড় জেলায় পদায়ন করা। স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২ জন করে স্পেশালিষ্ট ডাক্তার নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ। (৪) পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করে নির্মিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংটি দ্রুত চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৫) প্রত্যেক উপজেলার সরকারি হাসপাতাল গুলোতে পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান সহ জনবল নিয়োগ করে পরিক্ষাগার গুলো পুরোদমে চালু করা, যাতে নুন্যতম রক্তপরীক্ষা, এক্স-রে সহ যাবতীয় রক্তের পরিক্ষা-নিরিক্ষা সরকারি হাসপাতাল গুলোতে নিশ্চিত করা। (৬) জেলার সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশ থিয়েটার (ওটি) গুলো চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে সিজারসহ ছোট ছোট অপারেশন গুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ। (৭) সরকারি হাসপাতাল সমূহের খাবারের মান উন্নত করা। (৮) হাসপাতাল গুলোতে আউটডোর, ইনডোর, ওয়ার্ড এবং ক্যাবিনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত হাইজেনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৯) জেলার সকল বেসরকারি পরিদর্শন করে, পরিক্ষাগার সহ ক্লিনিক গুলোতে দক্ষ জনবল আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স
পুনর্মূল্যায়ন করা এবং লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবেত আলী বলেন, সিভিল সার্জন মিলে আমি এ বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে একটি করে পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। 

একই সাথে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নিত করার জন্য অবগত করা হয়েছে। আশা করছি স্বাস্থ্য খাতের সকল সমস্য দ্রুত সমাধান হবে। সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পঞ্চগড়ে চিকিৎসক সংকট নতুন না। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে আমি পঞ্চগড়ে আসার পর সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করি এই তরুণরা যে দাবি উপস্থাপন করে অনশনে বসেছে সেটা বাস্তব দাবি। অতি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলছি। একই সাথে তাদের আজকের এই অনশন কর্মসূচি ভাঙার জন্য বলেছি আমরা।

এআর

AddThis Website Tools