ঢাকা: হাইকোর্ট থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছেন, একের পর এক উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করবেন আর আমরা মাফ করে দেব- এটা হতে পারে না। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার (১৮ জুন) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।
শুনানির শুরুতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ সময় আদালত বলেন, আর কত উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করবেন। আদেশ মানবেন না, আবার এসে মাফ চাইবেন, এটা তো হতে পারে না। শুধু মাফ করার জন্য হাইকোর্ট বসে নেই। সবাইকে মাফ করা হাইকোর্টের কাজ না। শত শত বছর এই কোর্ট থাকবে। আদালতের মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এসব কাজের জন্য না। সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী ব্যারিস্টার তাজরুল ইসলাম আদালতে বলেন, কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারের হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার বিষয়টি পুলিশ জানত না। আসামিরা জামিননামা দেখাননি, লইয়ার্স সার্টিফিকেটও দেখানো হয়নি।
এ বিষয়ে আদালতের নজরে আনা আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কথা আসামিরা পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন। জামিনসংক্রান্ত লইয়ার্স সার্টিফিকেট দেখালে পুলিশ সেটা ছিঁড়ে ফেলেছেন।
আদালত বলেন, আমরা সব বিষয় দেখব। পুলিশ- আসামিদের কথাপোকথনের রেকর্ড তলব করছি।
এরপর আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেন। ওইদিন দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির হতে হবে।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমানকে তলব করেন হাইকোর্ট। ১৮ জুন সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। একইসঙ্গে জামিনে থাকা সত্ত্বেও উদ্দেশ্যমূলক গ্রেফতার করে বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লিখিতভাবে এই আদেশ দিয়েছেন।
আদালত আদেশে বলেছেন, মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারে পুলিশ সদস্যের আচরণ বা প্রক্রিয়া আইন পরিপন্থী। একইসঙ্গে তা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থী। এটা আইনের মীমাংসিত প্রস্তাব যে, প্রাসঙ্গিক আইন অনুসরণ না করে নাগরিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
আদেশে আরও বলা হয়, একজন পুলিশ অফিসারকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার আগে প্রথমে তাকে আইনি বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। এখানে আসামি ফৌজদারি বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে রয়েছেন। আইনজীবী উচ্চ আদালতের জামিনের বিষয়ে আসামিকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। উল্লিখিত মামলায় মনে হচ্ছে এএসআই মিজানুর রহমান আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের গাইডলাইন এবং আইনকে অবহেলা করেছেন। যার ফলে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মনে করি পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কারণ ব্যাখ্যা করবেন।
গত ২০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জামিন নেওয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন ২১ মে আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়া কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে আটক করে আদালতের পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার দিন রাতে আসামির বাড়ি থেকে আটকের পর শুক্রবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় পুলিশকে হাইকোর্টের জামিনের কপি দেখালে তা আমলে নেয়নি বলে দাবি আসামির পরিবারের। পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। তা দিতে না পারায় পুলিশি ক্ষমতার বলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও হাইকোর্টের জামিননামা দেখে শুক্রবার দুপুরে আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন।
আশরাফুল হাওলাদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের বাজারঘোনা গ্রামের আব্দুল লতিফ হাওলাদারে ছেলে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতি।
আশরাফুলের চাচা রাজা মিয়া বলেন, সদর থানা পুলিশের এএসআই মিজানুর রহমান তাকে আটক করেন। আশরাফুলের পরিবার ওই রাতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র ও জামিননামার অনলাইন কপি দেখায় পুলিশকে।
সোনালীনিউজ/এম