মতবিনিময় সভায় আলোচকরা

সৎ, যোগ্য ও মেধাবীদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের তাগিদ

  • আদালত প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ১০:১২ এএম

ঢাকা : রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, যোগ্য, সৎ, মেধাবী ও বিচাকাজের প্রতি আন্তরিক ব্যাক্তিদের।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রস্তাবিত ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এমন মত দেন আইন, বিচার ও সংবিধান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।  

সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন ও বিচার উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতে ভাল বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। এটা খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমাদের ১৭ কোটি নাগরিকদের সমস্ত মৌলিক অধিকারের মামলা উচ্চ আদালতের বিচারকেরা শুনেন। সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রচন্ড ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে যে কোনো সরকার এসে সকল ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘণের একটা অবাধ সুযোগ পেয়ে যাবে এবং এই কাজটাই গত ১৫ বছর করা হয়েছে। উচ্চ আদালত মানবাধিকার হরণ করা, মানুষকে নির্যাতন করা, নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছিল।’

[240637]

তিনি বলেন, ‘এই উচ্চ আদালতের অনাচার, আদালত ব্যবস্থার মাধ্যমে নীপিড়ন নির্যাতনের সবচেয়ে সমস্যা সংকুল বিধানটা হলো বিচারক নিয়োগে আইন। আমরা যদি ভাল আইন করতে পারি, ৩০/৪০ জন বিচারক নিয়োগ দিতে পারি তাহলে তারা ২০/ ৩০ বছর দেশকে সার্ভ করবেন।’  

তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের নামে কি হয়েছে তার বহু উদাহরণ আছে। উচ্চ আদালতে এমন বিচারক আছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিল। এমন বিচারক আছেন যারা কোনোদিন কোনো প্র্যাকটিস করে নাই। ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটে গেছে। আমি আমার ছাত্রজীবনে যে সমস্ত ছাত্রকে সবচেয়ে ফাঁকিবাজ, অমনোযোগী, পলিটিক্যালি ভায়াস্ট দেখতাম তারা উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। আমি হতবাক হয়ে যেতাম। তাই এই জায়গাটা আমাদের এড্রেস করতেই হবে।’  

অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে উচ্চ আদালতে নিয়োগ কমিটিতে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানকে রাখার প্রস্তাব করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন কোনো কোনো বিচারকের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, দুএকজনের যে বিদেশি নাগরিকত্ব নেই, বিষয়টি এমন নয়। বিদেশি নাগরিকত্ব গোপন করে তারা বলছে, তারা বাংলাদেশি। এখন তাদের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে আইন ও বিচার উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইন বলেন, ‘কিছু কিছু আইনজীবী হাইকোর্টে শুধু হাজিরা দিয়ে যান। আর বেইল পিটিশন মুভ করেন। যাদের কোনো যোগ্যতা নেই তারাও বিচারক হয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘৪৫ বছরের আগে কোনো আইনজীবীর মধ্যে কোনো ম্যাচিউরিটি দেখি না। তাই নিয়োগের সময় বয়সের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বিচারপতি হতে  আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়ার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং জেলা ও দায়রা জজ থেকে সমান সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রস্তাবিত সুপ্রিম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলে সুপ্রিম কোর্ট বার  সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে না রাখার পক্ষে মত দেন। এ ছাড়া জেলা ও দায়রা জজদের মধ্য থেকে হাইকোর্টে এক তৃতীয়াংশ বিচারপতি নিয়োগ দিতে এবং নিয়োগের সময়  বয়স ৪৫ এর পরিবর্তে ৪০ রাখার পরামর্শ দেন।  

সভায় আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী, রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান সাজু, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম, মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান প্রমুখ।

এমটিআই