ঢাকা : রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ছিনতাই। মাত্র তিন বছরে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে থানায় অভিযোগ পড়ছে কম। কারণ ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পথচারী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালে ছিনতাইয়ের মামলা ছিল মাত্র ৭৮টি। ২০১৯ সালে ১১৯ ও ২০২০-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৬টিতে। তবে খাতাকলমে এ হিসাব থাকলেও অধিকাংশই ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয় না। প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও ছিনতাই হচ্ছে। কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়েরকে অধিকাংশ ভুক্তভোগীই ঝামেলা মনে করেন। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশও মামলা নিতে চায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছিনতাইয়ে জড়িতদের বেশিরভাগই কিশোর, তরুণ বা গাড়িচালক। পুলিশ জানিয়েছে, কিছু ভুক্তভোগী মামলা করেন, অনেকে করেন না। কোনো থানা যদি ছিনতাইয়ের মামলা না নিতে চায়, তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে কারা ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে গাড়ি থেকে ব্যাগ টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এক ছিনতাইকারী। তদন্ত করে পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত সুমন পেশাদার ছিনতাইকারী নন। এক চলচ্চিত্র তারকার গাড়ি চালানোর ফাঁকে তিনি ছিনতাই করেন।
এদিকে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে প্রকাশ্যে ছিনতাই না হলেও ‘টানা পার্টি’র সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন বাসের জন্য অপেক্ষমাণ অফিসফেরতদের টার্গেট করে ব্যাগ কেটে নেয় মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে। আবার কখনো বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয় মোবাইল ফোন বা মানিব্যাগ। কারওয়ানবাজার থেকে ফার্মগেট মোড়ে নারী-পুরুষ মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ‘টানা গ্রুপ’ সক্রিয়। এর আগে ফার্মগেট কেন্দ্রিক একটি গ্রুপ সক্রিয় ছিল, যারা বোরকা পরে এ কাজ করতো।
আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ যাওয়ার রাস্তাও ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। আইডিবি ভবন থেকে তালতলা ও শেওড়াপাড়ার রাস্তায় মেট্রোরেলের কাজ চলায় অনেক স্থানে সড়কবাতি কম রয়েছে। ওইসব এলাকায় পুলিশের টহল অব্যাহত থাকলেও ছিনতাই থেমে নেই।
তাছাড়া মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, গোগীবাগসহ ওই এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ।
গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর কদম ফোয়ারায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন হামিদুল ইসলাম (৫৫) নামে এক কেবল টিভির সংযোগ ব্যবসায়ী। তোপখানা রোডে তার বাসা। এ ঘটনায় তার বড় ছেলে নাহিদুল ইসলাম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন বলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার জানিয়েছেন।
শাহবাগ থানার ওসি মো. মামুন অর রশিদ জানান, ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। ছিনতাইয়ে ব্যবহূত ছুরিও উদ্ধার হয়েছে। সোহেল মিয়া নামে এক ছিনতাইকারী হামিদুলকে ছুরিকাঘাত করেছিল। তিনি পেশাদার ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি শুধু পেশাদার নয়, রাজধানীতে এখন সক্রিয় অপেশাদার ছিনতাইকারীরাও। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু ছিনতাইয়ের সঙ্গে গাড়িচালক, কলেজ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ অনুসন্ধান চলছে।
সম্ভবত তারা দ্রুত টাকা আয় করতে চায়, কেউ লোভে পড়ে আবার কেউ অন্যের প্ররোচনায় পড়ে ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে। অনেকে আবার কারাগারে গিয়ে ছিনতাইচক্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। জেল থেকে বের হয়েই শুরু করে ছিনতাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতে চান না। আমি নিজে খোঁজ করে দুটি ঘটনার ভিকটিমকে মামলা করতে অনুরোধ করেছি। থানায় যদি মামলা না নিতে চায় তা হলে আমাকে জানাতে বলছি। আমরা চক্রগুলোকে ধরতে চাই। মামলা না করলে আমাদের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে যায়।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই