টিপ পরায় হেনস্তা: যেভাবে শনাক্ত হলেন কনস্টেবল নাজমুল

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২২, ০৪:০৯ পিএম
ফার্মগেট এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন কনস্টেবল নাজমুল তারেক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা : কপালে টিপ পরা নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় এক শিক্ষিকাকে হেনস্তার ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে চিহ্নিত করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সোমবার (৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, হেফাজতে নেওয়া ওই কনস্টেবলের নাম নাজমুল তারেক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে তাকে চিহ্নিত করেছি আমরা।

ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘পুরো তেজগাঁওয়ে কর্মরত সব সদস্যকে নিয়ে আমরা একযোগে তদন্তে নামি। সবার নিরলস প্রচেষ্টায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ও এনালগ সব পর্যায়ে তদন্তপূর্বক কনস্টেবল নাজমুলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি।’

জানা গেছে, টিপ পরায় কলেজশিক্ষিকাকে হেনস্তা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক কনস্টেবল পদমর্যাদায় ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত।

নাজমুলকে শনাক্তের পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে ‘কোনো একটি ঘটনা’ ঘটার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। সাধারণ ডায়েরির (জিডি) অভিযোগ তদন্ত করে নাজমুল দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত আটক দেখানো হয়নি। ডিএমপির তেজগাঁও জোনের জোর প্রচেষ্টায় তাকে শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কপালে টিপ পরে হেঁটে যাওয়ার সময় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় লাঞ্ছিত ও হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন অভিযোগ করে শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় জিডি করেন কলেজশিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক।

অভিযোগে লতা বলেন, টিপ পরায় এক পুলিশ সদস্য তাকে উত্ত্যক্ত করেন। প্রতিবাদ করলে তাকে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টাও করেন সেই ব্যক্তি।

পুলিশ সদস্যের দেহের গড়ন বলতে পারলেও তখন তার নাম জানাতে পারেননি ওই শিক্ষিকা।

এর পরদিনই কনস্টেবল নাজমুল তারেককে শনাক্ত করার কথা জানায় পুলিশ।

ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সোমবার দুপুরে তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জিডি করা হয়েছে, সেই পুলিশ সদস্যের নাম নাজমুল তারেক। তিনি ডিএমপির প্রটেকশন ডিভিশনে কর্মরত কনস্টেবল। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।

‘অভিযোগকারী ভদ্রমহিলার সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছে মর্মে তিনি স্বীকার করেছেন। সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগকারী নারী যে অভিযোগ তুলেছেন যথাযথ প্রক্রিয়ায় তার তদন্ত চালিয়ে ঘটনার সত্যতা তুলে আনা হবে।’

ড. লতা সমাদ্দারের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে আশ্বস্ত করেন ডিসি বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘অভিযোগে ওই নারী কিন্তু পুলিশ সদস্যের নাম ও পদবি বলেননি। শুধু একজন পুলিশ সদস্যের কথা বলেছেন। অভিযোগকারী শিক্ষিকা ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেছেন। সেই জিডির তদন্ত যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হবে।

‘আমরা অভিযুক্ত কনস্টেবল নাজমুল তারেকের সঙ্গে কথা বলেছি৷ অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন, তবে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘কোনো একটি ঘটনা ঘটেছে, সেটার সত্যতা আমরা পেয়েছি। এখন টিপ পরা বা ইভ টিজিংসংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জিডির তদন্ত করা হবে। আমাদের প্রাথমিক কাজ ছিল অভিযুক্তকে শনাক্ত করা। আমরা চেষ্টা করে পরিচয় নিশ্চিত করেছি, এখন বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে।’

নাজমুল তারেককে শনাক্তের প্রক্রিয়া জানিয়ে ডিসি বিপ্লব বলেন, ’অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা খুব গুরুত্বসহ তদন্ত শুরু করি। শুরু থেকে ডিএমপি কমিশনার, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ঘটনার যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। পুরো তেজগাঁওয়ে কর্মরত সব সদস্যকে নিয়ে আমরা একযোগে তদন্তে নামি।

‘সবার নিরলস প্রচেষ্টায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ও এনালগ সব পর্যায়ে তদন্তপূর্বক কনস্টেবল নাজমুলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। তার মোটরসাইকেলের নম্বর ধরেও নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।’

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সব জায়গায় আলোচনা হচ্ছে৷ সংসদেও আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনা হোক বা না হোক, আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করি। এ ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ