ঢাকা : এক যুগ আগে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুবৃর্ত্তদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন। কিন্তু এখনো এই হত্যার বিচার পাননি স্বজনরা। আর আসামিরা সবাই জামিনে।
আলোচিত এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদির দেওয়া নারাজির বিচারিক তদন্ত চলমান। বৃহস্পতিবার যার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার বাদি ও নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, এই মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি সঠিক ছিল না। সেখানে অভিযুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামিকেই বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র কামরুল আরও বলেন, যতদিন পর্যন্ত প্রকৃত আসামিদেরকে বিচারের আওতায় না আনা হবে, ততদিন আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মো. কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
প্রধান আসামি করা হয় তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডল প্রায় দীর্ঘ ৮ মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
[210148]
এতে মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন ওরফে মোবা, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তার ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এদিকে মামলার আসামিদের মধ্যে মোবারক হোসেন মোবা পলাতক ছিলেন। বাকি ১৩ জনের সকলেই গ্রেপ্তার হলেও অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই সবাই আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে যান।
দীর্ঘ ৭ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনিও বর্তমানে জামিনে মুক্ত। এরইমধ্যে ২০২১ সালে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আবদুল মতিন সরকার দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মারা গেছেন।
এদিকে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী মো. কামরুজ্জামান কামরুল। পরদিন আদালত নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন।
পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদি। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন।
এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদি। তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন করেন। আদালত বাদির আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করেন।
এ ঘটনায় জামিনে বের হয়ে আসামিরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশনে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় থাকার পর ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি আসামিদের করা রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে আদালত। একইসঙ্গে বাদির নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে এবং বাদি ও স্বাক্ষীগণের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৫ জুন নরসিংদী জজ আদালতের মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. রকিবুল ইসলাম শুধুমাত্র বাদী কামরুজ্জামানের জবানবন্দি গ্রহণ করে তদন্ত শেষ করে দেন।
এ ঘটনায় বাদি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। আদালত রিভিশন শুনানি শেষে পুনরায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদ আলী বলেন, মামলাটি বর্তমানে বিচারিক তদন্তাধীন রয়েছে। আগামি ২ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
এদিকে মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার ১২তম বার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে নরসিংদী জেলা ও শহর আওয়ামী লীগ এবং জনবন্ধু লোকমান হোসেন ফাউন্ডেশন।
এসব সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রয়াত লোকমান হোসেনের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল ও গণভোজসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
এমটিআই