ঢাকা : দেশের শেয়ারাবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নব-নিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে রেখেছেন কৃতিত্বের ছাপ।
অধ্যাপক শিবলী গত ১৭ মে বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়ার পরে তার কমিশনের নেওয়া কিছু উদ্যোগের ফলে বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যার প্রতিফলন দেখা যায় উভয় শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সূচকের চিত্রে।
সম্প্রতি তিনি দেশের পুঁজিবাজারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপচারিতা করেন সোনালীনিউজ-এর মো. আজাদ ফারুকের সঙ্গে। বিএসইসির চেয়ারম্যানের দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারের চম্বুকাংশ সন্মানিত পাঠকদের জন্য দেয়া হলো-
সোনালীনিউজ : শেয়ারবাজারে যখন অস্থিতিশীল, ঠিক তখন আপনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপরে দু’মাসের বেশি সময় পার হলো। এসময়ে বাজার স্থিতিশীল করতে আপনার কি কি উদ্যোগ ছিল?
অধ্যাপক শিবলী : আমাদের নতুন কমিশন বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে কাজ করছে। এরফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। আমরা একটা ভালো ক্যাপিটাল মার্কেট দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন কাঠামো, নীতিমালা ও সুযোগ-সুবিধা সব পেয়ে গেছি। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মার্কেটটাকে ঠিকভাবে গড়ে তোলা।
পুঁজিবাজারকে ভাইব্রেন্ট করতে গত দুই মাসে কয়েকটি ভালো কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছি। এর মধ্যে ওয়ালটনের মতো ভালো কোম্পানিও রয়েছে। শিগগিরই আরও একটি অনুমোদন দিচ্ছি। আমরা পুঁজিবাজারে সুশাসনের বিষয়টি বিশেষ জোর দিয়েছি।
সোনালীনিউজ : বিগত সময়ে দূর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পেয়েছে। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে কি উদ্যোগ নিচ্ছেন?
অধ্যাপক শিবলী : আইন ও বিধি-বিধান পরিপালন না করে কেউ পুঁজিবাজারে আসতে পারবে না। আমরা কোনোভাবেই এমন কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেব না। মন্দ কোম্পানি বাজারে এলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয় এমন কিছু আমরা অনুমোদন করব না। তাছাড়া অনেক কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেলই এমন যে এটি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারবে না। এমন কোম্পানিকেও আমরা পুঁজিবাজারে আনব না। যারাই পুঁজিবাজারে আসবে তাদের সবকিছু পরিপালন করেই আসতে হবে। পাশাপাশি ভালো ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের বিষয়ে কমিশন কাজ করছে। ভালো কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে সময় কম নেয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব হয় ভালো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া হবে।
সোনালীনিউজ : আমাদের শেয়ারবাজার এখনো শতভাগ ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসতে পারেনি। এক্ষেত্রে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি?
অধ্যাপক শিবলী : শেয়ারবাজারকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে দাঁড় করানোর কাজ শুরু করেছি। ২ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারকে ভালো অবস্থানে পাবেন এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শেয়ারবাজার ছড়িয়ে যাবে। আইটিতে আন্তর্জাতিক দক্ষ একজনকে নিয়োগের অনুমতি পেয়ে গেছি। তার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আইটি প্লাটফর্ম দাড় করানো হবে। এই প্লাটফর্মে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসব। আমি কথা দিচ্ছি, যতদিন দায়িত্বে আছি, ততদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হবে না, যদি না মানি মার্কেট বন্ধ থাকে।
সোনালীনিউজ : ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কি?
অধ্যাপক শিবলী : এই মুহুর্তে আমাদের শেয়ারবাজারে ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। যে কারনে হয়তো তাদের দিকেই একটু বেশি খেয়াল রাখতে হয়। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন কম। আমরা সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে শেয়ারবাজার সম্পর্ক্যে ধারনা দেওয়ার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে ব্যাপক কাজ করছি। আপনারা ২ বছরের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তবে তার আগে সাধারন বিনিয়োগকারীরা যেনো কোনভাবে ঠকে না যায়, সেদিকে আমাদের খেয়াল করতেই হবে।
সোনালীনিউজ : সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ দিনে দাবি ছিল বাই ব্যাক আইন করার। এ বিষয়ে আপনার কমিশনের অবস্থান কি?
অধ্যাপক শিবলী : বাই ব্যাক নিয়ে আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে এখানে কোম্পানি আইনের একটি বিষয় আছে। আমরা নিজেরা এটা করতে পারছি না। এ কারনে এ বিষয়ে কোম্পানি আইনে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।
সোনালীনিউজ : তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের সুশাসন নিশ্চিতে আপনাদের অবস্থান কী?
অধ্যাপক শিবলী : এই মুহুর্তে আমাদের কাছে সুশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা শুরু থেকেই কাজ করছি। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণে বাধ্য করতে বেশ কয়েকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজ কোম্পানির নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা বা নির্দেশনা মানছে না তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির পরিচালকরা। নূন্যতম শেয়ার ধারণ না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনালীনিউজ : বন্ড মার্কেট ভাইব্রেন্ট করতে আপনার কমিশনের কোন উদ্যোগ আছে কি?
অধ্যাপক শিবলী : আমাদের বাজারটা ইক্যুইটি নির্ভর। এখানে বন্ড মার্কেট ও ডেরিভেটিবস নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। ফিউচার অপশন নিয়েও কাজ করার সুযোগ আছে। যদিও আমাদের ডেরিভেটিবসের ক্ষেত্রে হয়তো অভিজ্ঞতার অভাব থাকতে পারে। তারপরেও আমরা প্রথমে বন্ড মার্কেটটাকে নিয়ে খুবই বড়ভাবে কাজ করার চিন্তা করছি। করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক আক্রমনাত্মক হতে হবে। আমরা খুব সাবধানে অর্থনীতিকে সেদিকে নিয়ে যাবো।
এজন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সেক্টর যারা ক্ষতিগ্রস্ত, যেমন ট্যুরিজম সেক্টর, হসপিটিলিটি সেক্টর, রিয়েলস্টেট সেক্টর, টেক্সটাইল সেক্টর, তারা যদি আমাদের কাছে শর্ট টার্ম, লং টার্ম, মিডিয়াম টার্ম বন্ড নিয়ে আসে, আমরা খুব দ্রুত তাদের সাহায্য করব। আইনগত সমস্যা না থাকলে এবং তাদের কাগজপত্র ঠিক থাকলে, খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়ে তাদের পুঁজির যোগান দিয়ে সাহায্য করতে চাই।
সোনালীনিউজ : দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আপনার বার্তা কী?
অধ্যাপক শিবলী : বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এখন দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের সঠিক সময়। এটা সবাই মিলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে বিষয়টি বুঝাতে হবে। বিএসইসি প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজ করছে। মার্কেটে বিএসইসি ইন্টারফেয়ার করে না। মূলত রুলস-রেগুলেশনের কাজ করে।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ/এমটিআই